অবশেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দুয়ার খুলে যাচ্ছে বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল এর সামনে। ৫ বছরের অপেক্ষার অবসান হচ্ছে ১৩ ই আগস্ট। আবারো জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামতে চান বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান মোহাম্মদ আশরাফুল।
২০১৩ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বিপিএল ফিক্সিংয়ের চারটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন বাংলাদেশ দলের তারকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে এই নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়। ২০১৭ সালে ক্রিকেট খেলার সুযোগ উন্মুক্ত হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং বিপিএল এর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠছে এই ১৩ ই আগস্ট।

১১ এপ্রিল ২০০১ একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক হয় ১৬ বছর বয়সী কিশোর, মোহাম্মদ আশরাফুলের। তখনকার ব্যাটসম্যানদের জন্য মুর্তিমান আতংক মুরালিধরন কে বেসামাল করে দিয়ে ৭ সেপ্টেম্বর তিনি যা করেছিলেন তা টেস্ট ক্রিকেটের ১৩০ বছরের ইতিহাসে কেউ কখনও করতে পারেনি। তিনি হলেন ইতিহাসের সর্ব কনিষ্ঠ অভিষেক টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান।
আবির্ভাবেই নিজের জাত চিনিয়ে দেওয়া আশরাফুল ক্রমে হয়ে ওঠেন এদেশের ক্রিকেটের আশার ফুল। শ্রীলংকার বিপক্ষে ব্যাক-টু-ব্যাক সেঞ্চুরি, ভারতের বিপক্ষে ১৫৮ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস, এরপর তার হাত ধরেই রচিত হয় রূপকথার সেই কাব্য। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে আকাশ থেকে মাটিতে নিয়ে আসেন এই আশরাফুল।
ঠিক ১০০ বলে হাঁকানো দুর্দান্ত তার ম্যাচন উইনিং সেঞ্চুরিতে এমন কিছু উদ্ভাবনি সট তিনি দেখিয়েছেন যা এক জীবনে দেখাতে পারেননি ক্রিকেটের বরপুত্র ব্রায়ান লারা কিংবা লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকার। ঠিক পরের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আরো দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান মোহাম্মদ আশরাফুল। দুরদান্ত কিছু পুল শর্ট এবং স্কুপে দিশেহারা করে দেন ইংল্যান্ডের বোলিং লাইন আপকে। ৫২ বলে ৯৪ রানের একটি অসাধারণ ইনিংস উপহার দেন সেই দিন।

২০০১ সালে অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিয়ানণ মোহাম্মদ আশরাফুল। বাংলাদেশ ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে দ্রুততম সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। তার সেঞ্চুরিতে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম জয় পায় বাংলাদেশ। হাবিবুল বাশার এরপর ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১৩ টি টেস্ট এবং ৩৮ টি ওয়ানডেতে বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ এ এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক জিতে বাংলাদেশ। সে দলের নেতৃত্বে ছিলেন আশরাফুল।
নিজের ভুলে ক্যারিয়ারে ভাটা পড়ে সাবেক এই অধিনায়ক এর। কিন্তু বিরতির পর অর্থাৎ ২ বছর আগে ব্যাট-প্যাড পরে মাঠে নামতেই লিস্ট এ ক্রিকেটে এক মৌসুমে ৫ সেঞ্চুরি করে রেকর্ড করেন আশরাফুল। এ দুই মৌসুমে ২৩ ম্যাচে তার গড় ৪৭.৬৩।

নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ক্রিকেট থেকে একটুও দূরে ছিলেন না আশরাফুল, পাশে পেয়েছেন ক্রিকেট বোর্ডের সবাইকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, এবারের ফার্স্ট ক্লাস এবং ডমেস্টিক সিজেনের জন্য তিনি খুবই আশাবাদী, তিনি ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট এবং সিলেকশন বোর্ডের সবাইকে ধন্যবাদ জানান এতদিন তার পাশে থাকার জন্য। এবার ঘরোয়া আসরে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দিয়ে নতুন করে জাতীয় দলে ফেরার লড়াই শুরু হবে আশরাফুলের।