ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনার কাছে ক্রিকেটের খবরাখবর ফিঁকে হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট দলই যে এমন ফিঁকে আর উধাও হয়ে যাবে এটা কেউ কল্পনাও করেনি। টি২০ তে আফগানদের কাছে কাবুলিওয়াশের মাস খানেক যেতে না জেতেই এবার টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে মাত্র ৪৩ রানেই গুটিয়ে গেল বাংলার টাইগারেরা।
Source: Cricwizz
অথচ মাস ছয়েক আগে সাবেক কোচ হাথুরুসিংহের আচমকা বিদায়ের পরবর্তী সফরটা বেশ ভাল ভাবেই শুরু করেছিল বাংলাদেশ। শ্রীলংকা সফরে প্রথম ওয়ানডেতে হেসে খেলেই স্বাগতিকদের হারিয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু পরের ম্যাচে হেরে তাঁদেরকে দক্ষিন আফ্রিকার ফেলে আসা ভুতে আবারো পেয়ে বসে। সিরিজে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটাই যে আর খেলতে পারে নি টাইগাররা। সেই থেকেই বাংলাদেশ এর পতনের শুরু। মাঝখানে নিদাহাস ট্রফিতে কিছু খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত নৈপুন্যে ভাল করলেও ধারাবাহিতা একদমই ছিল না।
ক্রিকেটটা যতটা না টেকনিকের খেলা তারচেয়ে বেশি আত্নবিশ্বাসের খেলা।
আত্নবিশ্বাসী থাকলে যে কোন দলের বিপক্ষেই অন্তত কিছু করে দেখাতে পারবেন আপনি। কিন্তু এই আত্নবিশ্বাসটাই যে একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকে বাংলাদেশের। যার সবচেয়ে বড় প্রমান দেহরাদুনে আফগান স্পিনারদের কাছে অসহায় আত্নসমর্পণ। সেই সিরিজের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আন্ডারডগের মত খেলেই হোয়াইওয়াশ হয় বাংলাদেশ।
আফগানিস্তান সিরিজের পর মাঝে নিজেদের ব্যস্ত সূচী থেকে বড় ধরনের ছুটি পায় বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সবাই ভেবেছিল হয়তো নিজেদের ভুলত্রুটি শুধরে নতুন রুপে সাত সমুদ্দুর পারি দিয়ে ক্যারিবিয়ান দ্বীপে যাবে টাইগাররা। তবে সেই নতুন রুপ যে এতটা ভয়াবহ হবে তা ছিল সবার কল্পনারও অতীত।
এন্টিগুয়ার সবুজ পিচে টসে হেরে প্রতপক্ষের আমন্ত্রণে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। সবুজ পিচ, মেঘলা আবহাওয়া আর বাতাস সবই পেস বোলারদের পক্ষে যাবে এটা জানাই ছিল। তার উপর সর্বশেষ শ্রীলংকার ক্যারিবিয় সফরে উইন্ডিজের পেস বোলারদের পারফর্মেন্স ছিল দেখার মত।
Source: Cricbuzz
সত্যি কথা বলতে কেমার রোচ একাই গুড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশকে।
তাঁর মাত্র ৫ ওভারের স্পেলেই বাংলার ব্যাটিং লাইনআপের প্রথম ৫ ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। কিন্তু তাই বলে মাত্র ৪৩ রানে গুটিয়ে যাবে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইনআপ!! লিটন দাসের ২৫ রান না হলে স্কোর বোর্ডের অবস্থা কি হত তা ভাবতে গেলেই গা শিউরে ওঠে!
Source: NDTV SPORTS
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাংলাদেশ ইনিংসের জবাব।
আশ্চর্যের কথা হল, বাংলাদেশের ৪৩ রানের প্রথম ইনিংসের জবাবে ক্যারিবিয়ানরা যখন ব্যাট করতে নামে তখন ব্যাটসম্যানদের মৃত্যুপুরী পিচ সপ্তম স্বর্গে পরিনত হয়। দিন শেষে ক্যারিবিয়দের দুটি উইকেট পেতে চোখের জল নাকের জল এক হয়ে যায় বাংলার বোলারদের। সে যাই হোক, ম্যাচের এখনো অনেক কিছুই বাকী। আর ক্রিকেট যদি তার চিরাচরিত অনিশ্চয়তার বৈশিষ্ট্য ধরে রাখে তবে অনেক কিছুই হওয়া সম্ভব। নিজেদের ধুলোয় লুটানো মান সম্মান কিছুটা হলেও ফেরত আনতে পারে কিনা বাংলাদেশ সেটাই এখন দেখার বিষয়।