বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বলছে যে তারা জাতীয় খেলোয়াড়েরদের স্পন্সার চুক্তির একটি দফা আরোপ করবে। যেখানে উল্লেখ থাকবে যে খেলোয়াড়রা পেশাগত কোম্পানিগুলোর সাথে এমন কোন ব্যক্তিগত চুক্তি করতে পারবেনা যে চুক্তি জাতীয় স্পন্সার কোম্পানির সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায়।

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় টেলিকম কোম্পানি রবি আজিয়াটা তাদের দুই বছরের মেয়াদ শেষ না করেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এর সাথে তাদের স্পন্সরশিপ চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তাদের এই সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এইরকম নিয়ম জারি করতে বাধ্য হয়েছে। যাতে করে ভবিষ্যতে অন্য কোন কোম্পানি এমনভাবে চুক্তি বাতিল করতে না পারে।
বিসিবি জানায় রবি তাদের নেতৃস্থানীয় খেলোয়ারদের বিরুদ্ধে রিজার্ভেশন রেখেছিল কিন্তু তা সত্বেও তারা রবির বিরোধপূর্ণ ব্রান্ডের সাথে ব্যক্তিগত চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল, যেমন মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং তামিম ইকবাল গ্রামীণফোন এর পক্ষে সমর্থন জানিয়েছিলেন এবং সাকিব আল হাসান বাংলালিংকের সাথে যুক্ত ছিলেন।
দেশের অনন্য শীর্ষস্থানীয় টেলিকম অপারেটর হিসেবে গ্রামীণফোন এবং বাংলালিংকে রবির দুটি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি বলে মনে করা হয়।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভবিষ্যতে আমাদের ক্রিকেটাররা আমাদের জাতীয় স্পন্সরদের বিরোধী ব্যান্ডের সাথে যুক্ত হতে পারবে না। শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়দের উপর রবির রিজার্ভেশন ছিল, এবং আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলাম ঠিক তখনই কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ করে রবি এরকম একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় যেটি আমাদের জন্য খুবই আশ্চর্যজনক ব্যাপার।”
নিজাম উদ্দিন আরো বলেন যে, “রাতারাতি বাংলাদেশ দলের শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়দেরকে তাদের ব্যক্তিগত স্পন্সরশিপ চুক্তি বাতিল করাটা খেলোয়াড়দের জন্য সহজ হবে না, কারণ ইতিমধ্যেই তাদের এই ব্যক্তিগত চুক্তির কারণে কোম্পানিগুলো খেলোয়াড়দের উপরে বেশ মোটা অংকের অর্থ বিনিয়োগ করে রেখেছেন।”
তিনি আরো বলেন, “আপনি কখনোই একজন খেলোয়ারকে তার ব্যক্তিগত স্পন্সরশিপ চুক্তি বাতিল করতে বলতে পারেন না। কারণ একজন খেলোয়াড়ের সাথে চুক্তি হবার পরে ওই কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরনের প্রমোশনের কথা চিন্তা করে অর্থ বিনিয়োগ করে থাকেন। আর হঠাৎ করে সে ব্যক্তিগত চুক্তিটি যদি বাতিল করে দেয়া হয় তাহলে এটি কোম্পানি এবং খেলোয়াড়ের উভয়ের জন্য ক্ষতিকর হবে।”
তিনি আরো বলেন আমরা বিষয়টি নিয়ে একটি সমাধানে আসার চেষ্টায় ছিলাম কারণ সাকিব এখনও তার চুক্তিটি পুনরমূল্যায়ন করেননি এবং তামিম ও তার ব্যক্তিগত চুক্তিতে আর অগ্রসর হচ্ছেন না। শুধুমাত্র যে একটি চুক্তি মাশরাফির সাথে করা হয়েছিল সেটি এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আছেন তবে আমাদের বিশ্বাস সেটিও খুব শিগ্রই শেষ হয়ে যাবে কিন্তু আমরা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না সে সময়টা কবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কারণে তারা আমাদেরকে কোন রকম সুযোগ না দিয়েই আমাদের সাথে তাদের চুক্তিটি বাতিল করে।

প্রথমে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মিডিয়া প্ল্যানিং কোম্পানি টপ অফ মাইন্ড বিসিবির কাছ থেকে স্বত্বাধিকার ৪১.৪১ কোটি টাকায় কিনে নেয়। পরবর্তীতে রবি বেশি দাম দিয়ে তাদের কাছ থেকে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ স্বত্বাধিকার কিনে নেয়।
রবি শুধু বাংলাদেশে পুরুষ এবং মহিলা জাতীয় দলের নন তারা অনূর্ধ্ব ১৯ এবং বাংলাদেশ এ দলের স্পন্সর হিসেবে কাজ করতে থাকেন ২০১৭ সালে চুক্তি শেষ হয়ে যাবার পরে বিসিবি নতুন দরপত্রের আহবান করেন। যেখানে সর্বোচ্চ দর ধরা হয়েছিল ৬০ কোটি টাকা এবং ৬ টি কোম্পানি সেখানে দরপত্র দাখিল করেন রবি তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপত্র দিয়ে বিসিবির সাথে স্পন্সর চুক্তিতে আবদ্ধ হয়।
পরিশেষে নিজাম উদ্দিন বলেন যে তারা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা চুক্তির পূর্ণ অর্থ দাবি করবেন এবং ইতিমধ্যে এই বিষয়ে আইনি পরামর্শ চাওয়া হয়েছে।