আজকে আমরা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মী কিছু জানাবো আপনাদের। একটা দুর্ঘটনা যে শুধু একটা পরবার নয় গোটা একটা প্রজন্মকে শেষ করে দিতে পারে সেই ঘটনা গুলোই আজ তুলে ধরবো। ভাবছেন খেলার খবরের ভিড়ে দুর্ঘটনা কেন। কারনটা হল দুর্ঘটনা গুলো সব খেলা এবং খেলোয়াড়দের জীবনের সাথে সম্পৃক্ত।
পৃথিবীর আদিমতম সামাজিক বিনোদন মাধ্যম হল খেলাধুলা। আর এই খেলা যে মাঠের ফলাফলের বাইরেও মানুষের সারা জীবনের কান্নার কারন হতে পারে সেই ঘটনাগুলোই এখন আপনাদের জানাবো।
তুরিনো এফসি, ৪ মে ১৯৪৯ (ইতালিয়ান ফুটবল ক্লাব)

১৯৪০ এর দশকটা ছিল ইতালির ক্লাব তুরিনোর কাছে সবচেয়ে স্মরণীয় সময়। চড়ম সুখ আর ভয়াবহ দুঃখ দুই অনুভুতিতেই স্মরণীয়। সেই সময়ের ইতালি জাতীয় দলের দশজনই ছিল টানা ৪ বার লিগ শিরোপাধারী এই তুরিনো (যা ঐ সময় গ্রান্ড তুরিনো নামে জনপ্রিয় ছিল) ক্লাবের। কিন্তু সেই সোনালী সময়ের সমাপ্তিটা যে এমন করে হবে তা কেউ দুঃস্বপ্নেও চিন্তা করে নি।
১৯৪৯ সালের ৪ঠা মে বিকেলে তারা লিসবন থেকে এস এল বেনফিকার সাথে প্রীতি ম্যাচ খেলে নিজেদের দেশে ফিরছিল। কিন্তু বাজে আবহাওয়া ও দুর্ভাগ্য তাঁদের আর ঘরে ফিরতে দেয় নি। ঘন মেঘ আর বৃষ্টির কারনে পাইলটের জন্যে ১০০ মিটার সামনের কিছু দেখাও দায় হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বিমানটি তুরিনের পাহাড়ে অবস্থিত প্রাচীন দূর্গ বেসিলিকা অফ সুপারেগার দেয়ালে আঘাত করে। এতে বিমানের মোট ৩১ জন আরোহীর সবাই মারা যান, যার মধ্যে ছিল ক্লাবের খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, সাংবাদিক সবাই।
এই দুর্ঘটনা ইতালির ফুটবলে এতই গভীর ছাপ ফেলেছিল যে তাঁরা পরের বছর ব্রাজিল বিশ্বকাপে জাতীয় দলকে জাহাজে করে খেলতে পাঠায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮ (ইংলিশ ফুটবল ক্লাব)

ইউরোপিয়ান কাপের (বর্তমানে চ্যাম্পিয়নস লিগ) কোয়াটার ফাইনালে য়্যুগোস্লোভিয়ার রেড স্টার বেলগ্রেদ কে হারিয়ে দেশে ফিরছিল ইংলিশ এই অভিজাত ক্লাবটি। ফেরার পথে পশ্চিম জার্মানির মিউনিখ বিমান বন্দরে জ্বালানী সংগ্রহের জন্যে যাত্রা বিরতি করে।
তুষারাবৃত রানওয়ে আর বৈরী বাতাসের সাথে বিমানের ইঞ্জিনে কিঞ্চিৎ ত্রুটি থাকায় বিমানবন্দর থেকে তাঁদের রাতে সেখানেই থাকতে বলা হয়। কিন্তু নিজের শিডিউল ঠিক রাখার জন্যে প্রধান পাইলট রাত থাকতে অস্বীকৃতি জানান এবং দুই বার ব্যর্থ হয়েও তৃতীয় বার টেক অফের চেষ্টা করেন। আর তাতেই রানওয়ের শেষ মাথায় এসে ছিটকে যায় বিমানটি। গাছের সারিতে আগাত লেগে ভেঙে যায় বাম ডানা আর আগুন ধরে যায় পেছনের অংশে।
আর বেশি নিরাপদ মনে ককরে সেখানেই ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেদের খেলোয়াড়েরা। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ২১ জন পরে হাসপাতালে আরো ২ জন। এদের মধ্যে দলটির কোচ, দুই কর্মকর্তা সহ ৮ জন খেলোয়াড় নিহত হন। আশ্চর্যজনক ভাবে প্রধান পাইলট বেচে যান এবং পরবর্তিতে তাকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়।
এন্টোনিও ভারাস, ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৫, (চিলিয়ান ফুটবল ক্লাব)

ম্যানচেস্টারের মিউনিখ ট্রাজেডির ঠিক সাত বছর পর ১৯৬৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি চিলির সান্তিয়াগোর ক্লাব এন্টোনিও ভারাস উরুগুয়ে যাচ্ছিল মন্টিভিডিওর ক্লাব কমাদেওর সাথে খেলতে। কিন্তু তাঁদের ফ্লাইটটি যাত্রা পথেই আন্দিজ পর্বতমালায় বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানটিতে থাকা ৮৭ জনের সবাই নিহত হয়, যার মধ্যে এন্টোনিও ভারাস ক্লাবের কর্মকর্তা আর খেলোয়াড়সহ ২২ জন ছিলেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার হল বিমানটি যেই অঞ্চলে বিদ্ধস্ত অবস্থায় পাওয়া যায় সেটা ঐ অঞ্চলের বিমান চলাচলের নিয়মিত কোন রুটের ধারে কাছেও ছিল না।
দ্যা স্ট্রংগেস্ট, ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৬৯ (বলিভিয়ান ফুটবল ক্লাব)
বিলিভিয়ার সবচেয়ে পুরাতন ক্লাব হল এই দ্যা স্ট্রংগেস্ট, যাদের কার্যক্রম এখনো চালু আছে। ২৪ সেপ্টেম্বর সান্তা ক্রুজ থেকে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেরার পথে ফ্লাইটটি নিখোঁজ হয় এবং দুই দিন পরে ২৬ তারিখে বলিভিয়ার ট্রেস ক্রুসেস পর্বতের কাছে বিধ্বস্ত অবস্থায় আবিষ্কার হয়। ধারনা করা হয় পাইলটের ভুলে প্রয়োজনের চেয়ে নিচু উচ্চতায় দিয়ে যাওয়ার করনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দলটির খেলোয়াড় আর কর্মকর্তা সহ ২০ জন ছাড়াও মোট ৭৪ জন আরোহীরর সবাই এই দুর্ঘটনায় প্রান হারান।
এখানেই শেষ নয় ।সিরিজের ২য় পর্ব নিয়ে আমরা অতি দ্রুতই হাজির হচ্ছি আপনাদের সামনে।