আমাদের প্রথম পর্বের দুর্ঘটনা গুলো জেনে যদি আপনাদের কিছুটা হলেও মন খারাপ হয়ে থাকে তবে এই পর্বে সেই হয়তো তা আরো বাড়তেও পারে। তাই বলে এমনটা ভাববেন না যে আপনাদের দুঃখটা আরো বড় করতেই আমাদের এই আয়োজন।
এই লেখাটির পেছনে এক বিশেষ কারন আছে। জানতে হলে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
মার্শাল ইউনিভার্সিটি, ১৪ নভেম্বর ১৯৭০ ( আমেরিকান ফুটবল দল)

আমেরিকান ফুটবলের এই দলটি তাঁদের এওয়ে ম্যাচগুলো সাধারণত সড়ক পথেই খেলতে যেত। কিন্তু এইদিন ইস্ট ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটির মাঠ হারার দুঃখ ভুলে তাড়াতাড়ি ঘরে ফেরার জন্যেই কিনা তাঁরা একটি প্রাইভেট বিমানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু বিমানটি ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া এয়ারপোর্টের রানওয়ের কাছে এসে গাছের সারির আঘাত হানে এবং বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে যায়। দলের ৩৭ খেলোয়াড় আর ৯ কোচিং স্টাফ সহ বিমানের মোট ৭৫ আরোহীর সবাই ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এর তিন মাস আগেও আরেক আমেরিকান ফুটবল দল উইচটা স্টেট ইউনিভার্সিটি দল বিমান দুর্ঘটনায় তাঁদের ১৪ খেলোয়াড়কে হারায়।
এফ সি পাখতাকর তাসকেন্ত, ১১ আগস্ট ১৯৭৯ (উজবেকিস্তানের ফুটবল ক্লাব)

এফ সি পাখতাকর তাসকেন্ত হল একমাত্র উজবেক ক্লাব যারা তৎকালীন টপ লেভেল সোভিয়েত ফুটবল লিগে খেলতো আর একমাত্র সেন্ট্রাল এশিয়ার দল যারা সোভিয়েত কাপের ফাইলানে উঠেছিল। ইউক্রেনের দ্নিপ্রোদজারজেহনস্ক (বর্তমানে কামিয়ানস্কি) তে মধ্য আকাশে আরেক বিমানের সাথে সংঘর্সে দলটির ১৭ সদস্য সহ দুই বিমানের ১৭৮ জনের সবাই নিহত হন। বিমানবন্দরের কন্ট্রোল সেন্টার থেকে ভুল বার্তা দেওয়ায় এই মারাত্মক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
জাম্বিয়ান জাতীয় ফুটবল দল, ২৭ এপ্রিল ১৯৯৩

১৯৮৮ এর সিউল অলেম্পিকে ইতালিকে ৪-০ গলে বিধ্বস্ত করা দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই ছিল এই দলে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে সেনেগাল যাওয়ার পথে গেবনের লিভারভিলে দুর্ঘটনার শিকার হয়। এই বিশেষ ফ্লাইটে জাতীয় দলের ২২ খেলোয়াড় সহ ৩০ জন ছিল, যাঁদের সবাই নিহত হন। টেক অফের কিছুক্ষণ পরে বাম ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়, কিন্তু পাইলট ভুলে ডান ইঞ্জিন বন্ধ করে দেন। আর এই একটি ভুলই যথেষ্ট ছিল দেশের ফুটবলের সম্ভাবনাময় এক প্রজন্মের করুণ সামাপ্তি ঘটাতে। কাকতালীয় ভাবে সেই লিবারভিলেই ২০১২ সালে আফ্রিকান কাপ অফ নেশন্স এর ফাইনালে আইভোরি কোস্টকে হারিয়ে শিরোপা জেতে জাম্বিয়া।
লোকোমোটিভ ইয়ারোস্লাভেল, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ (রাশিয়ান আইচ হকি দল)

রাসিয়ান আইস হকির শীর্ষ পর্যায়ের এই দলটি তাঁদের নিজ শহরের বিমানবন্দরেই এই দুর্ঘটনার শিকার হয়। রানওয়ের শেষ প্রান্তে এসেও বিমানকে উপরে তুলতে ব্যর্থ হন পাইলট আর তাতেই বিমানটি রানওয়ে পেরিয়ে ভোলগা নদীর তীরে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়। ৪৫ জন আরোহীর মধ্যে ৪৩ জনই দুর্ঘটনাস্থলেই মারা যান। এই দুর্ঘটনার কারনে দলটি সেই বছর লিগ থেকে নিজেদের নাম তুলে নেয়।
কেপকোয়েন্স, ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ( ব্রাজিলীয়ান ফুটবল ক্লাব)

খেলাধুলার সাথে সম্পৃক্ত হাল আমলে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনার শিকার ব্রাজিলীয় এই ক্লাবটি। ২০১৬ এতলেটিকো ন্যাসিওনালের সালের কোপা সাউদামেরিকার ফাইনাল খেলতে যাওয়ার পথে কলম্বিয়ার মেডেলিনে দুর্ঘটনার শিকার হয়।
এই দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ৭১ জনের সবাই নিহত হন যার মধ্যে ১৯ জনই ছিল দলটির মূল খেলোয়াড়। পরে ব্রাজিল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে অনূর্ধ্ব ২০ দল দিয়ে ম্যাচটি খেলানোর কথা বলা হলেও দুই দলই সে ম্যাচ খেলতে অস্বীকৃতি জানায়, যার ফলে দুই দলকেই ৩-০ গোলে পরাজিত ঘোষনা করা হয়। তাতে কি মানবতার জয়ের কাছে এই পরাজয় তো নিতান্তই মূল্যহীন।
সময় যে আসলেই সবচেয়ে বড় নিরাময়ক তা আরও একাধিক বার প্রমাণিত হয় ঘটনা গুলো দ্বারা। কারন দুর্ঘটনায় সৃষ্ট এই গভীর ক্ষত কাটিয়ে উঠে সব দলই আবার তাদের আগের অবস্থা ফিরে দেখিয়ে দিয়াছে যে ক্ষতকে কিভাবে শক্তিতে রুপান্তর করতে হয়। চাইলে আমরাও এ থেকে শিক্ষা নিতে পারি।