শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজ হারলো অসহায় বাংলাদেশ, ধবলধোলাইয়ের আশঙ্কা

শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজ হারলো অসহায় বাংলাদেশ, ধবলধোলাইয়ের আশঙ্কা
Image Source: Banglatribune.com

যদি বাংলাদেশ বনাম শ্রীলংকা চলতি ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ দেখে থাকেন, তবে ইয়োর্কার ঠেকাতে গিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবালের মাটিতে লুটিয়ে পরার দৃশ্যটি অবশ্যই দেখেছেন। যদিও প্রথম ম্যাচে মালিঙ্গার ইয়োর্কারে বোল্ড হয়েছিলেন তামিম, কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে নুয়ান প্রদীপের ইয়োর্কার কোন মতে ঠেকিয়ে বোল্ড হও্য়া থেকে বেচে যান তিনি। সে যাই হোক, তামিমের সেই ভূপাতিত ছবিটাই শ্রীলংকা সফরে পুরো বাংলাদেশ দলের প্রতীকী ছবি হয়ে দাড়িয়েছে।

প্রথম ম্যাচে ৯৩ রানের বিশাল ব্যাবধানে হারের পর আজকে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৭ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন টাইগার বাহিনী। সাকিব হীন বিশ্বকাপ পরবর্তী এই সিরিজটা বাংলাদেশ দলের অনেক খেলোয়ারের জন্যেই ছিল বড় পরীক্ষা আর নিজেকে প্রমাণের সুযোগ। কিন্তু কিসের কি! এক মুশফিক বাদে ব্যাটিং-বোলিং সব বিভাগেই ব্যর্থ পুরো বাংলাদেশ দল। আর এর ঠিক বিপরীত দিকে বিশ্বকাপ পূর্ববর্তী ‘অগোছালো’ শ্রীলংকা দলটাকেই মনে হচ্ছে পরিপক্ক মানসিকতার এক পরিপূর্ণ শক্তি।

প্রথম ম্যাচে শুরুতে বোলিং করে বেদম মার খাওয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে অবধারিতভাবেই ব্যাটিং এর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ব্যাটিয়ের নেমেও বাংলাদেশের সেই একই চেহারা। অতি সাবধানে ইনিংস শুরু করেও উইকেটে থাকতে পারেন নি টপ আর মিডিল অর্ডারের কেউ ই। যার ফলে ১৭৭ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকা বাংলাদেশে মুশফিক আর মিরাজের কল্যানে সবশেষে ২৩৮ রানের একটা পূঁজি পায়।আর মুশফিকুর রহিমের ৯৮ রানের অনবদ্য ইনিংসটি না হলে যে দলীয় স্কোর কোথায় গিয়ে দাড়াতো সেটা ভাবলেও ভয় হয়।

বাংলাদেশ বনাম শ্রীলংকা সিরিজের প্রথমের ম্যাচের দৃশ্যপট দেখে মনে হচ্ছিল দ্বিতীয় ইনিংসে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের উইকেট কিছুটা স্লো আর টার্নিং উইকেটে রূপ নেবে। সেই সম্ভাবনা অনুযায়ী ২৩৮ রান একেবারে খারাপ ছিল না। তবে ২৩৮ রান ডিফেন্ড করতে হলে শুরু থেকেই একটা দলের যে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থাকার কথা সেটা বাংলাদেশ দলের ভিতিরে কখনোই দেখা যায় নি। বরং উদ্বোধনী জুটিতে শ্রীলঙ্কা পেয়ে যায় ৭১ রান। সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ৩২ বল আগেই ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা। একই সঙ্গে এক ম্যাচ আগেই ২-০তে সিরিজ নিশ্চিত করে স্বাগতিকরা।

উদ্বোধনী জুটিতে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা অভিষ্কা ফার্নান্ডো (৮২) ও দিমুথ করুণারত্নের (১৫) গড়ে দেওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে শ্রীলঙ্কাকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ (৫২*) ও কুশল মেন্ডিস (৪১*)। ‍বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিতের সঙ্গে নিজের হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন ম্যাথুজ। ৫৭ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ৭ বাউন্ডারিতে।

শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজ হারলো অসহায় বাংলাদেশ, ধবলধোলাইয়ের আশঙ্কা
Image Source: Prothomalo.com

ম্যাচ শেষে নিজের হতাশা আর দলের অসহায়ত্ব দুটোই অকপটে স্বীকার করেন জীবনে প্রথম বারের মত দলের অধিনায়কত্বের ভার পাওয়া তামিম।

তিনি বলেন, ‘আমরা গুরুত্বপূর্ণ টস জিতেছিলাম, জানতাম উইকেটে স্পিন ধরতে যাচ্ছে। আমাদের শুরুটা ভালো করতে হতো।’ পরে দলের বোলিং সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি আরো যোগ করেন, ‘আমরা যেভাবে বল করেছি, তাতে  ব্যাটিংয়ে ৩০০ রান করলেও জয়ের জন্য যথেষ্ট হতো না। আমরা খুব বেশি পরিশ্রম করতে প্রস্তুত ছিলাম না, গা ছেড়ে দিয়েছিলাম আমরা।’

আর ৪৪ মাস পর দেশের মাটিতে সিরিজ জয়ের আনন্দ ছিল দিমুথ করুণারত্নের কণ্ঠে। শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমরা খুব ভালো করেছি। শুনলাম যে আমরা দেশের মাটিতে ৪৪ মাস পর জিতলাম। বোলাররা দারুণ করেছে, বিশেষ করে স্পিনাররা- আকিলা ও ধনঞ্জয়া। অনেক দিন পর ফিরেছে আকিলা, কিন্তু চমৎকার করেছে সে। অভিষ্কা শুরুটা ভালো করেছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেঞ্চুরিটা পেল না। আশা করছি খুব দ্রুতই সে তা পেয়ে যাবে।’

প্রথম দুই ম্যাচের বাজে পারফর্মেন্সে সিরিজ হারা বাংলাদেশ দলের সামনে সিরিজের শেষ ম্যাচে অপেক্ষা করছে ধবলধোলাইয়ের (পড়ুন লঙ্কাধোলাই) চোখ রাঙানি। এখম এই লঙ্কাধোলাইয়ের হাত থেকে বাঁচতে হলে শেষ ম্যাচে অতিকায় কিছুই করে দেখাতে হবে বাংলাদেশ দলকে।

, , , , , , , ,