শেষ আট এর পথ যাত্রায় ব্রাজিল

আরো একবার মেক্সিকো তাদের “পঞ্চম ম্যাচ খেলার অভিষাপ” ভাঙতে ব্যার্থ হল।

সেই ১৯৯৪ সাল থেকে তারা পরপর ৭ বার শেষ ষোলোর বাধা টপকাতে ব্যার্থ হচ্ছে এবং প্রতি বারই তারা পরাজয়ের স্বাদ গ্রহণ করছে।

এইবার অবশ্য তারা ব্রাজিল এর কাছে পরাস্ত হয়। এগুলোর ভিতর সম্ভবত সবথেকে বাজে অবস্থা ছিল গতবারের বিশ্বকাপ।

Source: Sportsinfohub

তারা সে বার খেলা শেষ হওয়ার ২ মিনিট আগে পর্যন্ত ১-০ গোলে এগিয়েছিল। কিন্তু অতিরিক্ত সময় তাদের সেই কাঙ্খিত স্বপ্নকে আর আটকে রাখতে পারে নি।

এবারের বিশ্বকাপেও জার্মানিকে হারিয়ে তাদের ধুমকেতুর ন্যায় আবির্ভাব ঘটেছিল। তারা অনেকটা আকাশেই উড়ছিল। কিন্তু শেষ ২ ম্যাচের পরাজয় তাদের শিখিয়ে দিয়েছেযে যত উপরেই উঠুক না কেন সবসময় মাটিতেই থাকতে।

অদম্য ব্রাজিল আজকের ম্যাচ চ্যাম্পিয়ন এর মতই শুরু করেছিল। অনেক দর্শকই হয়ত ভেবেছিল জার্মানি, আর্জেন্টিনা ও স্পেনের মত আজকের ম্যাচ ও তাদের এই আসরের শেষ ম্যাচ হতে যাচ্ছে। কিন্তু নেইমার-কোতিনহোর প্রচেষ্টা তা মিথ্যা প্রমাণিত করে।

যেখানে এই হার মেক্সিকোর জন্য ছিল পরপর ৭ বারের শেষ ষোলোর পরাজয় সেখানে এই জয় ব্রাজিলের জন্য ছিল পরপর ৭ বারের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার জয়। কোয়ার্টার ফাইনালে তারা জাপান অথবা বেলজিয়ামের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।

প্রথমে মেক্সিকো তাদের প্রথম গোল পেয়েই গিয়েছিল। খেলার ২ মিনিটের মাথায় গুয়ারদাদো গোলপোস্টের দিকে বা দিক থেকে বল ক্রস করে এবং ব্রাজিলের গোলকিপার আলিসন এক প্রকার বাধ্য হয়েই বলে ঘুষি মারে।

কিন্তু বল ঘুরেফিরে আবার মেক্সিকোর হারভিং এর কাছে পৌঁছে। হারভিং বলের গতি নিজ আয়ত্তে নিয়ে গোলপোস্টের দিকে জোরালো শট নেয়। কিন্তু তার এই শটের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ব্রাজিলের মিরান্দা।

মেক্সিকো শুধু সেখানেই থেমে থাকে নি। তারা ক্রমাগত বা প্রান্ত থেকে আক্রমণ চালাতে থাকে। তাদের এমন লক্ষ্যবস্তুর দিকে ভয়-ডরহীন আক্রমণ ব্রাজিলের রক্ষণভাগকে ভেদ্য বলেই মনে হচ্ছিল।

কিন্তু ব্রাজিলও আস্তে আস্তে গোল করার জন্য মরিয়া হয়েউঠে। বা দিক থেকে নেইমারের বাঁকা শটটি প্রায় গোল হয়েই গিয়েছিল। কিন্তু মেক্সিকোর গোলকিপার গুইয়েরমেরো ওচোয়ার কাছে নেইমারের শটটি পরাস্ত হয়।

এরপর ৩৩ মিনিটে গ্যাব্রিয়েল জেসুস গোল করার এক মহা সুযোগ পায়। মাঝ মাঠ হতে একটি দূর-পাল্লার পাস জেসুসের কাছে আসে। সে এবার বলটিকে কোতিনহোর কাছে পাস করে দেয়। মনেই হচ্ছিল যে সে শটটি নিবে।

কিন্তু মেক্সিকোর দুই ডিফেন্ডার দেখে কোতিনহো আবার জেসুসের কাছে ফিরতি পাস দেয়। জেসুস নেইমারের মতই বা দিক থেকে শট নেয় এবং আরো একবার তা গোলকিপার ওচোয়া ঠেকিয়ে দেয়। এরপর উভয় দলই প্রথমার্ধের খেলা কোন গোল না করেই শেষ করে।

নেইমার গোল করার জন্য সঠিক সময়কেই বেছে নিয়েছিল যখন ব্রাজিলে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠছিল। দ্বিতীয়ার্ধের পাঁচ মিনিট বাদেই উইলিয়ানের একটি চমৎকার ক্রস নেইমারের কাছে এসে ধরা দেয় এবং নেইমার অত কাছ থেকে গোল করার জন্য কোন ভুলই করল না।

Source: ESPN

“এই গোল ব্রাজিল এর বিশ্বকাপ ইতিহাসের ২২৭ তম গোল ছিল।” জার্মানি বাদে আর কোন দলই এখন পর্যন্ত ২০০ এর অধিক গোল করতে পারে নি।

এরপর মেক্সিকো সমতায় ফেরার জন্য অনেক সুযোগও পেয়েছিল। কিন্তু ব্রাজিলের গোলকিপার মাটিতে ঠায় দাঁড়িয়ে মেক্সিকোর সব প্রচেষ্টাকে ব্যার্থ করে দেয়।

খেলার ৮৬ তম মিনিটে ফিরমিনো বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামে। ২ মিনিট বাকি থাকতেই সে ব্রাজিলের জন্য গোল করে যা ব্রাজিলকে ২-০ গোলের লিড এনে দেয়।

নেইমারের পা দিয়ে হালকা বাড়ানো শট মেক্সিকোর গোলকিপার আংশিক ঠেকালেও দুর্ভাগ্যবশত তা আবার ফিরমিনোর কাছে গিয়েই পৌছে যা ফিরমিনোর জন্য গোল করাকে আরো সহজত করে দেয়।

Source:Youtube

এইবার মেক্সিকোকে দেখে আর মনে হচ্ছিল না যে তারা খেলায় ফিরতে সক্ষ্ম হবে। অবশেষে রেফারির বাঁশি বাজার সাথেই খেলার পরিসমাপ্তি ঘটল।

উল্লেখ্য যে এখন পর্যন্ত নেইমারের নেওয়া ২৩ টি শটের ভিতরে ১২ টি শটই লক্ষ্য বরাবর ছিল। এছাড়াও সে তার দলের অন্য খেলোয়াড়দের গোল করার জন্য সবথেকে বেশি (১৪ বার) সুযোগ করে দেয় যা এই আসরে এখন পর্যন্ত যে কোন খেলোয়াড়ের পক্ষে সেরা।

 

, , , , , , , , , , , , , ,