আর্জেন্টিনা
বর্তমান ফিফা র্যাঙ্কিং:: ৫
বিশ্বকাপে উপস্থিতি : ২০১৮ সালে ১৭ তম বার
বিশ্বকাপ ২০১৪: রানার্স আপ

বিশ্বকাপ আসলেই বাংলাদেশে যেই দুইটি দল নিয়ে উন্মাদনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় তার একটি হল আর্জেন্টিনা। ১৯৭৮ আর ৮৬ সালের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার গেল বিশ্বকাপে একেবারে তীরে গিয়ে তরী ডোবে। গত বিশ্বকাপের ফাইনালে যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে গোল হজম করে শিরোপা স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় তাঁদের। তবে এবারের আসরেও তাঁরা শিরোপা দাবিদারে তালিকায় ওপরের দিকেই থাকছে।
এবারের ল্যাটিন আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে যাবতীয় নাটকের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আর্জেন্টাইনরা। ১৯৭০ সালের পর প্রথম বারের মত বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়ার আশংকা চোখ রাঙাচ্ছিল আলবিসেলেস্তেদের। তবে নিজেদের ঘরের মাঠে যেই ইকুয়েডরের সাথে হেরে বাছাইপর্বের যাত্রা শুরু করেছিল আলবিসেলেস্তেরা সেই ইকুয়েডরকেই শেষ রাউন্ডে তাঁদের ঘরের মাঠে হারিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে মেসির আর্জেন্টিনা।
গত ১২ বছর ধরেই আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের ভার নিজের কাধে নিয়েই পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুঁটে বেড়াচ্ছেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি। কিন্তু নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েও যখন দলকে কোন শিরোপা জিতাতে পারছিলেন না তখন ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকার ফাইনাল হেরে অভিমানে জাতীয় দলই ছেড়ে দিয়েছিলেন এই জাদুকর। তবে খুব দ্রুতই নিজের সিদ্ধান্ত বদলে আবারো আকাশী সাদা জার্সি গায়ে তোলেন মেসি।
এই বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে নিজের ৩১ তম জন্মদিন পালন করবেন ফুটবলের এই মহান জাদুকর। তাই নিজের নামের পাশে একটা বিশ্বকাপ শিরোপার নাম লেখানোর এটাই আপাতত শেষ সুযোগ হিসেবে দেখছেন তিনি। অবশ্য এবার দল ব্যর্থ হলেও যে আকাশী সাদা শিবির ছেড়ে যাচ্ছেন না সেই অগ্রিম নিশ্চয়তাও দিয়ে রেখেছেন এই আর্জেন্টাইন।

মেসি ছাড়াও আর্জেন্টিনা দলটির আক্রমণ ভাগ যে কতটা তারকায় ঠাসা সেটা সিরি আ এর ২য় সর্বোচ্চ গোলদাতা মাউরো ইকার্দির দলে সুযোগ না পাওয়া থেকেই বোঝা যায়। আর মেসির মতই প্রায় একযুগ ধরে আর্জেন্টিনার মাঝমাঠের নির্ভরতার প্রতীক হয়ে আছেন এঙ্গেল ডি মারিয়া, সেই সাথে ডিফেন্সের মূল দায়িত্বে থাকবেন মাসেরানো আর ওটামেন্ডির মত অভিজ্ঞ সেনানীরা।
আসলে তাঁদের পুরো দলটাকেই বিশ্বকাপের জন্যে যোগ্য আর ভারসাম্যপূর্ণ একটা দল বলাই যায়। তবে শেষ মূহুর্তে ইঞ্জুরির কারনে দল থেকে ছটকে যাওয়া অভিজ্ঞ গোলকিপার রোমেরোর অনুপস্থিতি কিছুটা হলেও চিন্তার ভাঁজ ফেলছে কোচ হোর্হে সাম্পাওলির কপালে।
আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ স্কোয়াড
গোলকিপার: উইলি ক্যাবল্লোরো (চেলসি), ফ্রাঙ্কো আর্মানি (রিভার প্লেট), নাহুয়েল গুজম্যান (টাইগ্রেস)।
ডিফেন্ডার: গ্যাব্রিয়েল মারকাদো (সেভিলা), ফেডেরিকো ফাজিও (রোমা), নিকোলাস অটামেন্ডি (ম্যানচেস্টার সিটি), মারকোস রোহো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস টেগ্লাফিকো (আয়াক্স), হ্যাভিয়ার মাসেরানো (হেবেই ফরচুন), মারকোস অ্যাকুনা (স্পোর্টিং লিসবন), ক্রিশ্চিয়ান আনসাল্দি (তুরিনো)
মিডফিল্ডার: এভার বনেগা (সেভিলা), লুকাস বিলিয়া (এসি মিলান), এঙ্গেল ডি মারিয়া, গিওভানি লো স্যালসো (প্যারিস স্ট জার্মানী), ম্যানুয়েল ল্যানজিনি (ওয়েস্ট হ্যাম), ক্রিশ্চিয়ান প্যাভন (বোকা জুনিয়র্স), ম্যাক্সিমিলিয়ানো মেজা (ইন্ডি়প্যানডিয়েন্টে) এদুয়ার্দো সালভিও (বেনফিকা)
ফরোয়ার্ড: লিওনেল মেসি (বার্সেলোনা), গঞ্জালো হিগুয়াইন, পবলো ডিবালা (উভয়ি জুভেন্টাস), সার্জিও আগুয়েরো (ম্যানচেস্টার সিটি)
বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি আর্জেন্টিনা এবার নিজেদের ৩২ বছরের বিশ্বকাপ খড়া কাটাতে পারবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই খড়া কাটাতে হলে আর্জেন্টিনা দলকে মেসির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দলগত সামগ্রিক পারফর্মেন্সের দিকেই বেশি নজর দিতে হবে।
আইসল্যান্ড
বর্তমান ফিফা র্যাঙ্কিং:: ২২
বিশ্বকাপে উপস্থিতি : ২০১৮ সালে ১ম বার
বিশ্বকাপ ২০১৪: কোয়ালিফাই করতে পারে নি

এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপের অন্যতম বিস্ময় এই আইসল্যান্ড। যদিও প্রথম বারের মত বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাওয়া এই দলটি ফুটবল বিশ্বে নিজেদের অস্তিত্বের কথা ২০১৬ সালের ইউরোতেই জানান দেয়। সেই বছর প্রথম বারের মত কোন মেজর টুর্নামেন্ট খেলতে এসেই কোয়াটার ফাইনাল খেলে ফেলে মাত্র সাড়ে তিন লাখ জনগনের দেশ আইসল্যান্ড।
ইউরোপের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আই গ্রুপ থেকে শীর্ষ বাছাই হিসাবে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে উত্তর-পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি। ফুটবলের ইতিহাসে তাঁরাই বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া সবচেয়ে কম জনসংখ্যার জাতি। আইসল্যান্ড দলের প্রায় খেলোয়াড়েরই মূল পেশা ফুটবল নয়। অধিকাংশই ফুটবলটা শখের বসেই খেলে থাকেন। এমনকি তাঁদের কোচ হেইমির হলগ্রিমসনও পেশায় একজন দন্তচিকিৎসক, যার একটি সচল ডেন্টাল ক্লিনিকও রয়েছে আইসল্যান্ডে।
এভারটন মিডফিল্ডার গালফি সিগার্ডসন আইসল্যান্ড দলের সবচেয়ে বড় তারকা। তাঁর সাথে থাকছেন দলের নির্ভরতার আরেক প্রতীক অধিনায়ক এইনার গুনারসন। এই জুটিকে নিয়েই থাকছে কোচের আক্রমণের মূল পরিকল্পনা। আর রক্ষণভাগে থাকছেন র্যাগনার সিগার্ডসন আর কারি আরনাসন। আর গোলকিপার হিসেবে হ্যানেস হ্যাইল্ডারসনকে দলের জন্যে একটি মূল্যবান সম্পদই বলতে হবে।

আইসল্যান্ড বিশ্বকাপ স্কোয়াড
গোলকিপার: হ্যান্স হ্যালডর্সসন (রান্ডার্স), রানার অ্যালেক্স রুনার্সসন (নর্দেজেল্যান্ড), ফ্রেডারিক শর্ম (রোস্কিল্ড)।
ডিফেন্ডার্স: অ্যারি ফ্রাইয়ার স্কুলাসন (লকেরেন), হর্ডুর ম্যাগনাসন (ব্রিস্টল সিটি), র্যাগনার সিগার্ডসন (রস্টোভ), কারি আর্নেসন (অ্যাবেডিন), হেল্মার অরেন আইজফস্সন (লেভস্কি সোফিয়া), স্যাভররি ইনজি ইগ্রেশন (রস্টোভ), বিরকির মার সায়েভারসন (ভ্যালুর) স্যামুয়েল কারি ফ্রিজসনসন (ভেলেইঞ্জা)
মিডফিল্ডার: গিলফি সিগার্ডসন (এভারটন), অ্যারন গিনারসসন (কার্ডিফ সিটি), এমিল হেলফ্রেডসন (উদিনা), বীরকির বার্জারনসন (এস্টন ভিলা), জোহান বার্গ গুডমন্ডসন (বার্নে), ওলফুর ইনজি স্কুলেসন (করবক্সপোর), অরনর ইনভী ট্রাসসশন (মালমো), রুরিক গসলসন (স্যান্ডহাউজেন)
ফরোয়ার্ড: আলফ্রেড ফিনবুগাসন (অগসবুর্গ), বজর্ন বার্জম্যান সিগার্ডসন (রস্টোভ), জন দাদি বোডভারসন (রিডিং), আলবার্ট গুডমন্ডসন (পিএসভি আইন্ধুভেন)।
এখন দেখার বিষয় এটাই যে গ্রুপ ডি এর মত কঠিন গ্রুপের সদস্য হিসেবে রাশিয়া বিশ্বকাপে আইসল্যান্ড কতদূর যেতে পারে। তবে ফুটবল দক্ষতার পাশাপাশি হার না মানা মানসিকতাও এই যাত্রায় তাঁদের যথেষ্ট সহায়ক শক্তি হিসেবেই কাজ করবে বলে মনে হচ্ছে।