আসলেই কি লজ্জার ছিল? হ্যা, ছিল। এই লজ্জাটি ম্যাচের পরে জেগে উঠে। কিন্তু তার আগে? শুরু থেকেই স্টেডিয়ামের পরিবেশ ভিন্ন ছিল। এটা ছিল তড়িৎ এর মত। সম্ভবত স্নায়ুবিক চাপও মেসির ভিতরে প্রবেশ করেছিল যা ক্যামেরায় ধরা পড়ে। অতি দ্রুতই খেলাটি একটি উচ্চ ভোল্টেজের খেলায় পরিণত হয়।

উভয় দলই একটি সুযোগের জন্য মরিয়া হয়ে যাচ্ছিল। সবার প্রথম সু্যগটি আসে ৪ মিনিটে ক্রোয়েশিয়ার হাত ধরে কিন্তু তারা তা কাজে লাগাতে পারে নি। এরপর আবার তারা একটি কর্ণার পায়। লুকা মদ্রিক কর্ণারটি নেয় কিন্তু ম্যাশ্চেরানো আত্মবিশ্বাসের সাথে তা হতে আর বিপদ হতে দেয় নি। আর্জেন্টিনার সমর্থকগণ ওই সময়ের জন্য কিছুটা স্বস্তি পায়।
এখন আর্জেন্টিনার সময় আসল। অতি অপেক্ষার সুযোগগুলো আসল। হ্যা, ২টি সুযোগ ১১ ও ১২ তম মিনিটে। প্রথম সুযোগটি অতটা সহজ ছিল না। কিন্তু পরেরটা! এইবার যাদুকার মেসি মিস করে যা অনেকটা ধাক্কাজনক ছিল। এটা অতিআশ্চর্যের ছিল যে মেসি মিস করল।
কিন্তু সব থেকে বড় সুযোগটি তৈরি হয় ২৯ মিনিটে। এই ধরণের সুযোগ বলে কয়ে আসে না। ওহ! প্রিয় পেরেজ। তুমি এটা কি করলে? তোমার কাছে শুধু একজন ক্রোয়েশিয়ান এবং গোলপোস্ট ছিল। তোমার বলটিকে আরো পাশ দিয়ে পাঠানো উচিত ছিল।

শুধুমাত্ত্রই কি আর্জেন্টিনা সুযোগ হাতছাড়া করেছে? না, ক্রোয়াশিয়াও খেলার অর্ধেক সময়ের কিছু পূর্বে ২টি বড় সুযোগ হাতছাড়া করে। প্রথমে রেবিক ও পরে মদ্রিক সোনালী সুযোগটি হাতছাড়া করে।
এই হাতছাড়াগুলো বেশিক্ষণ ক্ষণস্থায়ী হয় নাই। অবশেষে রেবিকই ঘণ্টাটা বাজাল। কিন্তু ৯০% অবদান আর্জেন্টিনার গোলকিপার উইলি ক্যাবেলিরোর। আহ! কি সহযগিতাটাই না করল। সে যেন শিয়ালের কাছে মুরগী বর্গা দিল। ইহা সম্পূর্ণ আর্জেন্টিনা সমর্থক ও খেলোয়াড়দের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। আমদের বলুন আপনিই ওই সুবর্ণ সুযোগ পেলে কি করতেন। আর কি? রেবিক আর এবার সুযোগের হাতছাড়া করল না।
এরপর আর্জেন্টিনা খেলোয়াড় পরিবর্তনের দাক দিল। পাভোন আসল সাল্ভিওর পরিবর্তে আর গঞ্জালো হিগুয়াইন আসল আগুয়ারোর বদলে। এই সামান্য পরিবর্তন আর্জেন্টিনার হেটারদের কিছুটা হলেও হাসাল। ক্ষণিক পরে ক্রোয়াশিয়াও গোলকারী রেবেকের বদলে ক্রামারিককে নামাল।

আবার ৬৩ মিনিটে আর্জেন্টিনার জন্য বড় সুযোগ! এই সুযোগ স্কোরকে সমতা করার জন্যও ছিল। কিন্তু ক্রোয়াশিয়ান রক্ষণভাগ বাধা হয়ে দাড়াল। প্রথমে হিগুয়াইন বল নিয়ে মেজার কাছে পিছে পাঠাল। তার শট সেবাসিকের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে মেসির কাছে যায়। আবার মেসি সুযোগের হাতছাড়া করল। এবার র্যাকিটিচ ত্ত্রাণকর্তা হয়ে আসে এবং বলটিকে কর্ণার করে। কিন্তু কর্ণারটি আর্জেন্টিনার জন্য ভেস্তে যায়।
এক গোল হজমের পর আর্জেন্টিনা উন্মত্ত হয়ে পড়ে এবং ক্যামেরায় কিছু উত্তপ্ত ঘটনা ধরা পড়ে। মেসি নিজেও তার নিয়ত্ত্রণ হারায়।
আর্জেন্টিনা সম্ভবত ভুলে গিয়েছিল যে ফুটবল একটি দলগত খেলা। তারা শুধুমাত্ত এক মেসির উপর নির্ভর করতে পারে না। এরপর ৮০তম মিনিটে আর্জেন্টিনায় একটি টর্নেডো আসল। এই সময় লুকা মদ্রিক টর্নেডো হয়ে আসে। ৩০ গজ দূর থেকে কি দৃষ্টিনন্দন শটই না সে নিল! ক্যাবেলেরোর ডাইভটিও বলটিকে থামা হতে বাচাতে পারল না।
সবশেষে হ্যারিকেন আসল। র্যাকিটিচ অতিরিক্ত সময়ে তার সাথে হ্যারিকেন নিয়ে আসে। আর্জেন্টিনা সমর্থকগণ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। মেসি তার আওনুভূতিগুলো লুকানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু সে ই বা কি করতে পারে যখন একটি হ্যারিকেন আসে?

এই গ্রুপটি আসলেই একটি মরণ গ্রুপে পরিণত হয়ে উঠেছে। ড্রও হল না। শুধুমাত্ত্র একটি ৩-০ গোলের পরাজয়। সমীকরণ আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। শেষ ম্যাচটি আর্জেন্টিনার জন্য একটি বাঁচা মরার ম্যাচ হবে। আর্জেন্টিনাকে নাইজেরিয়া বনাম আইসঅল্যান্ডের ম্যাচের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু তাদের নাইজেরিয়া বনাম ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচের জন্যও অপেক্ষা করতে হবে। ২৬শে জুনই বুঝা যাবে এই গ্রুপ ডি থেকে কারা শেষ ১৬তে খেলতে পারবে।