হারের কোন সংজ্ঞা নেই। ৯০ মিনিট পরে এটা সবসময়ই পরাজয়। ইহাই প্রথমবার নয় যেকোন বর্তমান বিশ্বকাপজয়ী দলগ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিল। আসলে জার্মানি গত পাঁচ বিশ্বকাপ জয়ী দলের মাঝে চতুর্থ যারা বিশ্বকাপের ১ম পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে। আর আবশ্যই ৮০ বছর বাদে জার্মানি কোন বিশ্বকাপের ১ম পর্ব থেকেই বাদ গেল।

ইহা স্মরণে থাকার কথা যে জার্মানি রাশিয়ায় শুধু বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবেই আসেনি তারা গত গ্রীষ্মকালীন কনফেডারেশন কাপের চ্যাম্পিয়নও বটে।
জোয়াকিম লো ভাল ভাবেই আবগত ছিলেন যে তাদের রক্ষ্ণভাগ নিয়ে অনেক সমস্যা ছিল যদি আমরা সুইডেনের বিপক্ষে ম্যাচটিকে জার্মানির উন্নতি করার সু্যোগ হিসেবে দেখে থাকি। ইহা আরো লক্ষ্ণীয় যে মেসুত ওজিল, যিনি কিনা প্রথম দুই ম্যাচে একাদশেই ছিলনা তাকে আজ খেলানো হয় এবং মুলারকে শুরু থেকেই না খেলানো হয় যা তাদের দলের সমন্বয়ে ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকতে পারে। কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা যে এই খেলোয়াড়্গুলো গত ৪ বছর ধরে তাদের ক্লাবের হয়ে খেলায় ব্যস্ত ছিল না!
আজকের ম্যাচ ছিল ভুল পাসের বন্যা যা ভাল ভাবেই দেখা যাচ্ছিল। তারা তাদের সঠিক ছন্দের মধ্যে ছিল না। খেলোয়াড়দের নিজেদের মাঝে ভাল সংযোগের উপস্থিতিই ছিল না। অতিরিক্ত নিরীক্ষণ দল এবং খেলোয়াড় কারো জন্যই ভাল না যা আজকের ম্যাচ হারার মূল হতে পারে। এই হার সম্ভবত ২০০৪ এর ইউরো থেকেও খারাপ।

সাউথ কোরিয়া ২ মিনিটের মাথায় জার্মান ভাগের ডান দিকে কর্ণার পতাকার কাছে একটি “থ্রো” পায় । ইহা তাদের জন্য একটি ভাল শুরু ছিল। শীঘ্রই তারা আক্রমণে যায় কিন্তু তা অগ্রভাগে পৌঁছার আগেই ভেস্তে যায়।
এরপর ৪র্থ মিনিটে ওজিল কু এর দ্বারা মাঝমাঠে পড়ে যায়। এই ঘটনা তাকে রাগান্বিত করে তোলে। এটা দেখতে কতই না ভাল হত যদি সে তার এই রাগ পুরো ৯০ মিনিট জুড়েই দেখাতেপারত।
খেলার শুরু থেকেই দক্ষিণ কোরিয়া যে আক্রমণাত্মক খেলবে তা অনুধাবিত হচ্ছিল না যখন তা জার্মানির স্বাভাবিক খেলা। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল যে তারা জার্মেনির জন্য অপেক্ষা করছিল কখন জার্মেনি তাদের রক্ষ্ণন ভাগ ভেঙ্গে গোল দিয়ে যায়।

খেলার ১৪ তম মিনিটে জার্মানি নেকড়েদের মত পুরো দল নিয়েই আক্রমণে যায়। কিন্তু তা কর্ণারে রূপ নেয় যা কোন গোল এনে দিতে পারেনি। এর ঠিক পরের মিনিটেই জার্মানিকে আরো একটি কর্ণার উপহার দেওয়া হয়। ক্রজ ও রেউস কর্নারের ওই খানেই দাঁড়ানোই এবং বল ওজিলের কাছে পাস দিয়ে দেওয়া হয়। ওজিল তা পোস্টের দিকে শট নেয় এবং সুলে তা মাথা দিয়ে নিচে নামিয়ে দেয়।
১৯ তম মিনিটে জুং অনেক দূর দৌড়ে আসে এবং বলকে গোলের দিকে পাঠাতে আঘাত করে। প্রথমে ন্যূয়ার তা ধরার চেষ্টা চালায় কিন্তু সে বলের উচ্চতা সম্পর্কে ভাল অবগত না থাকার দরুন তা তার গ্লোভস হতে পড়ে যায়। ইহা জার্মনির জন্য বিপদ ডেকেই আন ছিল। যখন সন বলটিকে গোলের জন্য নিক্ষেপ করতে আসে। কিন্তু ন্যূয়ার তার আগেই বলকে ধাক্কা মারে এবং দক্ষিণ কোরিয়া একটি কর্ণার পায়।
উভয় দলের জন্যই অনেক সুযোগের হাতছানি ছিল বিশেষ করে জার্মানির জন্য। হামেলসের জন্য আজকের দিনটি ভাল যায়নি। সে যত দিন বেঁচে থাকবে ততদিন হয়তোবা আজকের দিনের কথা মনে রাখবে। সে একবার নয়। তিন বারের অধিক সোনালী সু্যোগ হাতছাড়া করেছে।

আসল নাটিকা শুরু হয় খেলার অতিরিক্ত সময়ে। দক্ষিণ কোরিয়া কর্ণার পেল। কর্ণার হতে বল কিমের কাছে গেল এবং সে বলকে ভিতর পাঠায়। কিন্তু বাঁধ শেধে বসল অফসাইড। এরপর ভিএআর দ্বারা নিরীক্ষা করা হল। কিন্তু ফলাফল দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষেই গেল যা জার্মান দলকে সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে দিল।
জার্মানি খুব ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল এবং আক্রমণে গেল। এই আক্রমণ তাদের আর বাঁচাতে পারল না। ৯০+৬ দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য আরো একটি সুবর্ণ সুযোগ আসল যখন ন্যূয়ার নিজের বল বাদ দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার পাশে ব্যস্ত সময় পার করছিল। এইবার সন গোলকরল এবং জার্মানির উপর তাদের জয়কে সিল মেরে দিল। এটিও ভিএআর এর জণ্য যাচ্ছিল কিন্তু ধ্বংস আগেই ঘটে গেল। জার্মেনিকে পরের বিশ্বকাপের জন্য শুভকামনা রইল।