কি ফুটবল বিশ্বকাপ শেষ বলে মন খারাপ? মন খারাপ তো হতেই পারে। এক মাস ব্যাপী ফুটবলের এই রোমাঞ্চ যে আসে চার বছর পর পর। কিন্তু তাতে কি? গ্রীষ্মের দলবদলের বাজারের খবরাখবর তো আছে! আসলে প্রতি গ্রীষ্মেই এই সময়টাতে ইউরোপের ফুটবলের ক্লাব পাড়া জমজমাট থাকে দলবদলের চমকদার সব খবরে। আর সেই দলবদলের বাজারে বাড়তি হাওয়া যোগ করেছে এবারের বিশ্বকাপ।
কি ছিল না এবারের বিশ্বকাপে?
রোমাঞ্চ, উত্তেজনা, হতাশা, ঘটন-অঘটন এই সব কিছু যেমন ছিল, তেমনি ছিল ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সের হিসেবনিকেশ। আর সেই হিসেবটা খুব ভাল ভাবে কশেই মাঠে নেমেছে ইউরোপের ক্লাব গুলো।

বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়েই দলবদলের সবচেয়ে বড় খবরটা আসে রিয়াল মাদ্রিদের সদ্য সাবেক হওয়া তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কাছ থেকে। রিয়ালের সাথে দীর্ঘ ৯ বছরের সম্পর্কের ইতি ঘটিয়ে ইতালির তুরিনের ক্লাব জুভেন্টাসে যোগ দেন তিনি। অবশ্য যেই নেইমারের পেছনে ছুটতে গিয়ে রোনালদোকে হারালো রিয়াল, সেই নেইমারের অন্তত এই মৌসুমে রিয়ালে না আসাটা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে।
অন্য দিকে এবারের বিশ্বকাপের সেরা উদীয়মান তারকা এমবাপ্পে সারা বিশ্বের পাশাপাশি রিয়ালের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের দৃষ্টিও কেড়েছেন। কিন্তু তাতেও মনে হয় না খুব একটা লাভ হবে, কারন এখনই রিয়ালে খেলার ব্যাপারে তেমন একটা আগ্রহ প্রকাশ করেনি এই ফরাসি বিস্ময়।

কিন্তু রিয়ালকে তো রোনালদোর জায়গা পূরণ করতে হবে, তাই এখন রিয়ালের সম্পূর্ণ মনোযোগ বেলজিয়াম আর চেলসি মিডফিল্ডার এডেন হ্যাজার্ডের উপর। অবশ্য হ্যাজার্ডও মনে হচ্ছে রিয়ালে আসার ব্যাপারে আগ্রহী।
এই যেমন বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার আগেই তিনি বলেছিলেন, “চেলসি ছাড়ার এটাই হয়তো সঠিক সময়।” পরে তিনি আরো যোগ করেন, “রিয়ালে খেলা তো সবারই স্বপ্ন।”
রিয়ালের পছন্দের তালিকায় আরো আছেন হ্যাজার্ডের চেলসি আর বেলজিয়ান সতীর্থ থিবো কোর্তোয়া। বেলজিয়ামের গোলবারের নিচে বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফর্ম করে গোল্ডেন গ্লাভস জয়ী এই গোলকিপারকে দলে ভেড়াতে উঠেপড়েই লেগেছে রিয়াল। যদিও চেলসির সাথে তাঁর চুক্তির এখনো এক বছর বাকি।

আর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স দলের আরেক বিস্ময় রাইটব্যাক বেঞ্জামিন পাভার্ড কে নিয়েও দল বদলের বাজারে বেশ কাড়াকাড়ি পরেছে। বর্তমানে স্টুডগার্ডের এই খেলোয়াড়কে পেতে লাইনে আছে ইংলিশ লিগে ম্যানচেস্টারের দুই নগর প্রতিদ্বন্দ্বী আর চেলসি। এমনকি জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখও দলে পেতে চাইছে ২২ বছরের এই তরুণ ফরাসিকে।
এই দিকে বিশ্বকাপে দারুণ খেলা ক্রোয়েশিয়ার দুই উইঙ্গার ইভান পেরেসিচ আর আন্তে রেবিচকে দলে ভেড়াতে বেশ মরীয়া হয়ে উঠেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ হোসে মরিনহো।
রাশিয়াকে কোয়াটার ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারিগর রুশ মিডফিল্ডার আলেক্সান্দ্র গোলোভিনকে দলে নেওয়ার দৌড়ে আছে ইংলিশ দুই ক্লাব আর্সেনাল ও চেলসি।

শুধু যে বিশকাপের লম্বা দৌড়ের ঘোড়ার পিছনেই ছুটছে ক্লাবগুলো তা নয়।
প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়া সার্বিয়ার মিলিনকোভিচ-সাভিচকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইংলিশ ক্লাব চেলসি আর ইতালির ক্লাব জুভেন্টাস। আর জাতীয় দলের হয়ে বরাবরই আলো ছড়ানো সুইজারল্যান্ডের জার্দান সাকিরিকে এরই মধ্যে দলে নিয়ে ফেলেছে আরেক ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল।
আসলে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেলেও ক্লাব ফুটবলে বিশ্বকাপের পারফর্মেন্স সবসময়ই আলাদা গুরুত্ব বহন করে। আর তাই এবারের দলবদলের বাজারও এর ব্যতিক্রম নয়।