টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট শুরুর পর থেকেই ক্যারিবীয় ক্রিকেট আর টি-টুয়েন্টি যেন সমার্থক হয়ে গেছে। বতর্মান টি-টুয়েন্টি এর বিশ্বচ্যাম্পিয়নও এই ক্যারিবীয়রাই। আর টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের সেরা এই দলটিকে তাঁদের ঘরের মাঠে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ এ নিজেদের করে নিল টাইগাররা।
কথায় আছে “শেষ ভাল যার, সব ভাল তার”। আর এই প্রবাদের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হয়ে থাকলো বাংলাদেশের এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর।
টাইগারদের সফরটা যেখানে শুরু হয়েছিল টেস্টে মাত্র ৪৩ রানে অলআউট হওয়া দিয়ে, সেই সফরটাই কিনা শেষ হল ওয়ানডে আর টি-টুয়েন্টি সিরিজ জয়ের মধ্যে দিয়ে। সত্যিই, ঘুরে দাড়ানোর এক অনন্য উদাহরণ গড়ে দেখালো টাইগাররা।

আগের দিন ২য় টি-টুয়েন্টিতে অসাধারণ এক জয়ের দিয়ে সিরিজে সমতা ফেরায় বাংলাদেশ। আর সিরিজে সমতা ফেরানোর পাশাপাশি নতুন এক অর্জনের হাতছানিও ছিল বাংলাদেশ দলের সামনে। টি-টুয়েন্টিতে বড় কোন দলের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের আশাবাদ নিয়ে আজ মাঠে নামে সাকিব বাহিনী। আর ম্যাচের শুরুটাও বাংলাদেশের জন্যে ছিল একদম স্বপ্নের মত।
২০ ওভারের ক্রিকেটে উড়ন্ত সূচনা বলতে যা বোঝায় আজকের ম্যাচে ঠিক সেভাবেই শুরু করে বাংলাদেশ। এমন ফ্লাট উইকেটে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিতে একটুও দেরি করেননি অধিনায়ক সাকিব। আর ম্যাচের প্রথম বলেই স্যামুয়েল বাদ্রিকে সুইপ করে চার মেরে ঝড়ো কিছুর আভাসই দিয়েছিলেন ওপেনার লিটন দাস।
এরপরে লিটন আর তামিমের তান্ডবে মাত্র ৩.৪ ওভারেই সবচেয়ে দ্রুত দলীয় ৫০ পূর্ণ করে বাংলাদেশ। আর পাওয়ারপ্লের ৬ ওভার শেষে দলের রান গিয়ে দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৭১ এ। এটিও পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। আর এই সবই সম্ভব হয়েছে লিটন দাসের ঝড়ো ব্যাটিং এর কল্যানে।

পাওয়ারপ্লের পরে কাছাকাছি সময়ের মধ্যে সৌম্য আর মুশফিক সাজঘরে ফিরে গেলে দলের রানের গতি কিছুটা কমে আসে। আর ১১তম ওভারে দলীয় ১০২ রানে ৪র্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আউট হন লিটন তখন তাঁর নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৩২ বলে ৬১ রানের অসাধারণ এক ইনিংস।
লিটনের বিদায়ের পরে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আর সহ-অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। পরবর্তী ৫ ওভারে এই জুটি যোগ করে ৪৪ রান। আর সাকিবের বিদায়ের পরে আরিফুলকে সাথে নিয়ে দলেকে ১৮৪ রানের বেশ ভাল সংগ্রহ এনে দেন রিয়াদ। ২০ বলে ৩২ করে অপরাজিত থাকেন তিনি। এর মাঝখানে অবশ্য বৃষ্টির জন্যে কিছুক্ষনের জন্যে খেলা বন্ধ থাকে।
আগের দিন ১৭১ রান ডিফেন্ড করে ম্যাচ জেতা বাংলাদেশের বোলাররা আজও বেশ আত্মবিশ্বাসী মনোভাব নিয়ে বল করতে নামে। বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে উইন্ডিজ ইনিংসের শুরু থেকেই ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখে। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভার শেষে ক্যারিবিয়ানদের সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে মাত্র ৩২ রান।

এরপরে দীনেশ রামদিন আর রভমান পাওয়েল জুটি কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুললেও উইন্ডিজের প্রয়োজনীয় রান রেট ক্রমশ বাড়তেই থাকে। উইন্ডিজ ইনিংসের ১২ তম ওভারে রামদিন আউট হওয়ার পর যখন বিধ্বংসী অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল ক্রিজে আসেন তখন ৫১ বলে ১০৮ রান প্রয়োজন ছিল তাঁর দলের। প্রায় অসম্ভব এই সমীকরণ মেলাতে মাঠে নেমেই তান্ডব চালাতে থাকেন এই অলরাউন্ডার। একেক করে মাঠের বাইরে আছড়ে ফেলতে থাকেন সাকিব-মুস্তাফিজদের।
৬ টি বিশাল ছক্কা আর ১ চারে মাত্র ২০ বলে ৪৭ রান তুলে ফেলেন ক্যারিবীয় এই দানব। শেষ ৩ ওভারে ক্যারিবীয়দের প্রয়োজন পরে ৫০ রানের। ক্রিজে আন্দ্রে রাসেল নামের দানব বিদ্যমান থাকায় এই অসম্ভব সমীকরণও সম্ভব মনে হচ্ছিল। কিন্তু ১৮ তম ওভারের প্রথম বলেই মুস্তাফিজকে লং অফের উপর দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে আরিফুলের তালুবন্দি হন এই দানব।

আর রাসেলের আউট হওয়ার সাথে সাথে যে ক্যারিবীয়দের জেতার সম্ভাবনাও শেষ হয়ে গিয়েছিল, ফ্লোরিডার আকাশও তা আন্দাজ করে ফেলেছিল। আর সে কারনেই যেন এরপরেই শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। আর বৃষ্টি আইনে প্রয়োজনের চেয়ে তখন ১৯ রান পেছনে ক্যারিবীয়রা। বৃষ্টি থামতে থামতে স্থানীয় সময় রাত ১২ টা পার হয়ে যাওয়ায় ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ হয় ঐ বৃষ্টি আইনেই।
ম্যাচের শুরুর বিধ্বংসী ইনিংসের কারনে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন লিটন দাস, আর ব্যাট-বলে অসাধারণ পারফর্মেন্সের পাশাপাশি চৌকস অধিনায়কত্বের জন্যে সিরিজ সেরা নির্বাচিত হন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব। যদিও এই জয়ের কৃতিত্ব পুরো দলকেই ভাগ করে দিতে একটুও কার্পণ্য করেননি অধিনায়ক সাকিব।