আইসিসি টেস্ট র্যাংকিং এ বাংলাদেশ তাঁদের সেরা অবস্থানে পৌঁছে গেছে। সর্বশেষ প্রকাশিত র্যাংকিং এ গত বছরে পাওয়া ৪ টি প্লাস পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ এখন ৮ম স্থানে আছে। একই সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গত বছর থেকে ৪ পয়েন্ট হারিয়ে বাংলাদেশের মোট পয়েন্ট ৭৫ থেকে ৮ পয়েন্টের ব্যবধানে পিছিয়ে ৯ম স্থানে অবস্থান করছে।
এই পর্যায়ে পৌঁছাতে বাংলাদেশের ১৮ বছর সময় লাগলো। অবশ্যই, এটা আমাদের দেশের ক্রিকেটের জন্য একটি অত্যন্ত ইতিবাচক খবর। কিন্তু আমারা এই অর্জনে আসলে কতটা নিজেরা অর্জন করেছি? আমরা কি সত্যিই এটার যোগ্য নাকি অন্যের খারাপ খেলার সুবিধা নিয়ে এই অবস্থানের মালিক হয়েছি?
আমরা আমাদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে এর উত্তর খোজার চেষ্টা করব। বাকিটুকু পড়ার জন্যে আমাদের সাথেই থাকুন।
আমরা ২০০০ সাল থেকে ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ফর্মেটে খেলছি। শুরুর সময়টি বেশ কঠিনই ছিল। আমাদের কোন প্রথম শ্রেণীর ঘরোয়া লীগ ছিল না। এমনকি আমাদের শুরুতে কোন ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধাও ছিল না।
প্রকৃতপক্ষে, যে কোন নবযাত্রীর জন্যই এটি একটি খুব স্বাভাবিক দৃশ্য। কিন্তু আমরা আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির উপর দৃষ্টিপাত করতে চাই। আমাদের ক্রিকেট শীর্ষ পর্যায়ে প্রায় ১৮ বছর ব্যয় করে ফেলেছে। আর বর্তমান জগতের হিসেবে এই সময়কালকে আপনি কোন মতেই উন্নতি লাভের জন্যে সংক্ষিপ্ত সময় হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন না। স্পষ্টতই আমরা অনেক উন্নতি করেছি, কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের ক্ষেত্রে আমরা শৈশবেই জীবনযাপন করছি।
আপনি আমাকে ভুল প্রমাণ করতে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলংকার সাথে পাওয়া অসাধারণ জয়ের কথা উল্লেখ করতে পারেন। কিন্তু আপনি কি বুকে হাত রেখে বলতে পারেন যে সেগুলি আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ফল ছিল? আমার তো তা মনে হয় না। আমি এই জয় গুলোকে নির্দিষ্ট কয়েকজন খেলোয়াড়ের অসাধারণ পারফরম্যান্সের ফল হিসেবেই বিবেচনা করব।

এখন প্রশ্ন, এত বছর পরেও কেন আমাদের টেস্ট দলের এই জরাজীর্ণ চেহারা? আমরা এর দায় কাকে দিতে পারি?
দায়টা কি আইসিসির? যারা আমাদেরকে প্রাপ্য খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে। নাকি আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের সুস্পষ্ট ও সুদৃঢ় পরিকল্পনার চড়ম অভাবই দায়ী ?
আমাদের সম্ভাব্য উত্তর হল, উভয়ই। এই অবস্থার জন্যে এই দুটি সংগঠনই সমান দায়ী। প্রথম কথা হল বছরের পর বছর ধরে আমাদের সূচীতে পর্যাপ্ত টেস্ট ম্যাচই রাখা হয় নি। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ১০৬ টি ম্যাচ খেলেছে, আর যেখানে শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ গত ১৮ বছরে যথাক্রমে ১৬৯ ও ১৭৫ টি টেস্ট খেলেছে।
আর বিদেশের সফর নিয়ে তেমন কিছু নাই বা বললাম, কারন বিদেশ সফর বলতে বাংলাদেশ বছরের পর বছর জিম্বাবুয়ে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজই ঘুরে আসছে। অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের সফর এতটাই বিরল যে, আপনি সেখানকার খারাপ পারফর্মেন্সের জন্যে কোন মতেই খেলোয়াড়দের দোষারোপ করতে পারেন না।
কেন আইসিসি এই ধরনের বৈষম্য বজায় রাখছে যখন বাংলাদেশে ক্রিকেটের বিশাল একটি বাজার রয়েছে? এর উত্তর আসলেই আমাদের অজানা।
এখন তার সময় আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করার। আমরা শুরু থেকেই টেস্ট ক্রিকেটের জন্য একটি সঠিক পরিকল্পনা তৈরি এবং তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছি। এখন পর্যন্ত, টেস্টের কোন বিভাগের জন্যই আমাদের কোন যোগ্য ব্যাকআপ খেলোয়াড় নেই।
আমাদের বোলিং লাইনআপের দিকেই দেখুন। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই জুটি ভাঙার জন্যে আমরা নির্দিষ্ট কোন বোলারের উপর নির্ভর করি। যদি সে ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা রান পাহাড়ে চাপা পড়বো এটা নিশ্চিত।মুস্তাফিজ ছাড়া, সেখানে অন্য কোন নিয়মিত পেস বোলারও নেই।
ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রেও আমরা কিছু নির্দিষ্ট নামের উপর নির্ভর করি। যদি তাঁরা বড় স্কোর করতে ব্যর্থ হয় তাহলে আমাদের ইনিংস নূন্যতম রানের আগেই ধ্বসে পড়ে। কিন্তু কেন?
আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খান যখন বলেন, আন্তর্জাতিক স্তরে খেলার মত ১০০ এরও বেশি লেগ স্পিনার রয়েছে তাঁদের, সেখানে আমরা একজনও তৈরি করতে পারি নি। এটা শুনতে আসলেই খুব কষ্ট লাগে।
এই ক্ষেত্রে, আমাদের বোর্ডই এই বিষয়গুলির জন্য সরাসরি দায়ী। কেননা, এখনও তারা টেস্ট ফরম্যাটকে তেমন গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনই মনে করছে না। তারা হঠাৎ পাওয়া কয়েকটি জয় নিয়েই খুশি থাকছে। কিন্তু এটা বলতে খারাপ লাগছে যে দীর্ঘ মেয়াদী ভাল ফলাফলের জন্যে এই ধরনের ভাবনা কোন কাজেই আসবে না।
আর বোর্ড যদি এই ধরনের জোড়াতালির দল দিয়েই টেস্ট ক্রিকেটটা চালিয়ে যেতে চায়, তবে টেস্টে বড় দল হওয়ার স্বপ্নটা আজীবন স্বপ্নই থেকে যাবে।