প্রথমেই স্পোর্ট নিউজ বিডি এর পক্ষ থেকে একটি উষ্ণ অভিবাদন স্পেন ও পর্তুগালের ২য় পর্বে উঠার জন্য।
আরো একবার গতকাল প্রমাণিত হল কেন ফুটবলকে পৃথিবীর সবথেকে সেরা প্রদর্শনী বলা হয়। এখন পর্যন্ত গ্রুপ পর্বে গ্রুপ বি অন্যতম লড়াইগুলোর মাঝে একটি অনন্য লড়াই দেখিয়েছে। সম্ভবত সমর্থকেরা আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়ার মাঝে আরো একটি হাড্ডা হাড্ডি লড়াই এর সাক্ষী হতে যাচ্ছে।

গতকাল পর্তুগাল বনাম ইরান এবং স্পেন বনাম মরক্কোর উভয় ম্যাচই চরম উত্তেজনার ছিল যদিও স্পেনের গ্রুপ সেরা হওয়া ছাড়া আর তেমন কোন কিছুই হারানোর ছিল না। অন্যদিকে পর্তুগাল ও ইরান উভয় দলেরই অনেক কিছু হারানোর ছিল। অবস্থা এমন ছিল যে, যে হারবে সেইই বাদ যাবে। কিন্তু ম্যাচটি ড্র হল এবং ইরানকে তার খেসারত দিতে হল। যার পরিপ্রেক্ষিতে ইরানকে এই বড় মঞ্চ থেকে বিদায় নিতে হয়।
শুরু থেকেই স্পেন-মরক্কোর ম্যাচে ইহা পরিষ্কারভাবেই পরিলক্ষিত ও সহজ ছিল যে স্পেনের লক্ষ্যই ছিল গ্রুপ সেরা হওয়ার। কিন্তু মরক্কো এই ম্যাচ জেতার জন্য চেষ্টার ত্রুটি রাখে নি। ‘

এটা বলার কারণই ছিল ম্যচের ১৪ তম মিনিট। মরক্কোই তাদের লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রথম পদক্ষেপটি নিল। খেলার ১৪ তম মিনিটেই ফরোয়ার্ড খালিদ, সার্জিও রামোস ও আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝির একটি সুবর্ণ সুবিধা নেয় যার ফলাফল মরক্কোর ১-০ ব্যবধানের লিড। তিনি এই গোলটি স্পেনের গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়ার পায়ের মাঝ দিয়ে বল পাঠিয়ে করেন।
স্পেনকে অবশ্য ম্যাচে ফেরার জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় নি। লা রোজা সম্ভবত এটিই ভেবেছিলেন যে আক্রমণাত্মক খেলাই কেবল তাদের ম্যাচে ফেরাতে পারে। তাই তারা মরক্কোর রক্ষ্ণভাগের ডান দিক দিয়ে আক্রমণ চালাতে থাকে এবং অতি দ্রুতই তারা তার ফল পেয়ে যায়। এভাবেই খেলায় সমতা ফিরে।

অন্য সকল ম্যাচের মত এই ম্যাচও ছিল অনেক সুযোগের ভান্ডার। আরো একবার বোতৈয়ব ও গোলপোস্টের মাঝে গোল রক্ষক ছাড়া আর কিছুই ছিল না। ডি গিয়াকে একা পেয়েও সে গোল করতে ব্যর্থ হয়। ডি গিয়া তার ডান উরুদিয়ে বলটিকে আটকিয়ে দেয়।
ইনিয়েস্তাও মরক্কোর বা দিক থেকে প্রতিআক্রমণ চালাতে থেকে। খেলার প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে সে একটি সোনালী সুযোগ এর হাতছাড়া করে।
এরপর দ্বিতীয়ার্ধে মরক্কো প্রায়ই লিড নিয়েই ফেলেছিল। কিন্তু খেলার ৫৫ মিনিটে নর্দান আম্রাবাতের অকুতোভয় ড্রাইভ গোলপোস্টের কর্ণারে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আসে। এরপর আবার ৬২ মিনিটে স্পেনেরও সুযোগ এসেছিল এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়।

স্পেনকে বলের উপর ভালই কর্তৃত্ত করতে দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে মরক্কো সাধ বেঁধে বসল। তারা আরো একটি গোল করে খেলায় এগিয়ে যায়। এবার এন-নেসিরি গোলটি করেন।
মরক্কো ভেবেছিল যে “স্পেনের হাত থেকে খেলা ফসকে গিয়েছে।“ কিন্তু ইহা মরক্কোর জন্য ভয়াবহ পরিণাম ডেকে নিয়ে আসল। খেলার অতিরিক্ত সময়ে অ্যাস্পাসের ব্যাকহিল স্পেনকে মরক্কোর কাছে হারার স্বাদ থেকে বাচাল। স্পেনের ভাগ্য ভাল ছিল যে এবার ভিএআর উপস্থিত ছিল। না হলে হয়ত তা অফসাইড হিসেবেই গণ্য হত।

দ্বিতীয় খেলায় পর্তুগালও ইরান থেকে এগিয়ে ছিল। খেলার প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে গোল করে পর্তুগালকে লিড এনে দেয়। সবকিছু পর্তুগালের দখলে ছিল বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু খেলার শেষ মুহূর্তে অতিরিক্ত সময়ে পর্তুগাল ভিএআর নাটকটির জন্য প্রস্তুতই ছিল না। ইরান ভিএআর এর জন্য আবেদন জানায় যেহেতু পেনাল্টি এরিয়াতে হ্যন্ডবল হয় যা রেফারির চোখে প্রথমে আসে নি। রেফারিকে ইরান প্রণোদিত করল এবং পেনাল্টি ইরানের পক্ষেই গেলো।
ইরান গোল করতে কোন ভুল করল না। কিন্তু এর পরবর্তী মিনিটেই তারা গোলের সু্যোগ হাতছাড়া করল এবং সেই সাথে পর্তুগালের থেকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগও হাতছাড়া হল। সবশেষে খেলাটি ড্র হল। ইরানের জন্য একটি হৃদয়বিদারক অবস্থার সৃষ্ট হল। তাদেরকেও এই টুর্নামেন্ট ত্যাগ করতে হবে।