বর্তমান দুনিয়ায় মিডিয়ার কাছে সবচেয়ে আলোচিত আর সমালোচিত উভয় খবরই হল ধর্ষণ বা যৌন হয়রানি মূলক ঘটনা। ক্রীড়াবিদ থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ সব ধরনের সেলিব্রিটিদের জড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে যৌন কেলেঙ্কারির চটকদার সব খবর। এবার সেই খবরের তালিকায় যোগ হল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নাম।

অন্য সকল সেলিব্রিটিদের মতই রোনালদোর যৌন হয়রানির মামলাটিও বেশ পুরোনো। তবে পুরোনো ঘটনা হলেও এর গুরুত্ব বেশ ভালই। কারন তার বিপক্ষে সরাসরি অভিযোগ উঠেছে ধর্ষণের।
রোনালদোর বিপক্ষে অভিযোগ তিনি ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসের এক হোটেলে ক্যাথরিন মায়োরগা নামের এক মডেলকে ধর্ষণ করেছিলেন। অবশ্য খবরটা গত বছরই প্রকাশিত হয়েছে জার্মান পত্রিকা ডার স্পিগেল।
গত মাসে নেভাডার এক জেলা আদালতে নতুন করে মামলা করেছেন মায়োরগা। রোনালদো অবশ্য ঘটনা প্রকাশের পর থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন। রোনালদোকে সমর্থন করে টুইট করেছে তাঁর বর্তমান ক্লাব জুভেন্টাসেও।
জুভেন্টাসের টুইটারের অফিশিয়াল একাউন্ট থেকে টুইট করা হয়েছে, ” রোনালদো গত কয়েক মাসে অসাধারণ পেশাদারিত্ব ও আত্ননিবেদন দেখিয়েছে, জুভেন্টাসের সবাই যেটির প্রশংসা করে। ১০ বছর আগের কোন একটা ঘটনার অভিযোগের কারনে (জুভেন্টাসের) সেই অনুভুতি বদলাবে না। এই গ্রেট চ্যাম্পিয়নের সংস্পর্শে এসেছেন, এমন যে কেউই এর সঙ্গে একমত হবেন”
এত আলোচনা সমালোচনার মধ্যেও আজ রাতে উদিনেসের বিপক্ষে রোনালদোর মাঠে নামা নিয়ে কোন সংশয় থাকছে না। জুভেন্টাস কোচ মাসিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রি বলেন, “মাঠে ও মাঠের বাইরে ওর পেশাদারিত্ব নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। কাল মাঠে ফিরতে সে প্রস্তুত। “
রোনালদোর স্পনসররা অবশ্য বিষয়টাকে অতটা হালকা ভাবে নিচ্ছে না৷ তাঁর সবচেয়ে বড় স্পনসর নাইকি তাঁদের এক মুখপাত্রের মাধ্যমে এএফপিকে তাঁদের উদ্বেগের জানিয়ে বলেছে, ” অস্বস্তিকর এই অভিযোগ নিয়ে আমরা বেশ উদ্বিগ্ন। আমরা খুব কাছ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবো।”
তা তো নাইকি পর্যবেক্ষণ করবেই। রোনালদোর সাথে যে তাদের আজীবন চুক্তি। নিজেদের কোম্পানির ইতিহাসে রোনালদো ছাড়া আর শুধুমাত্র বাস্কেটবলের দুই কিংবদন্তি লেব্রন জেমস আর মাইকেল জর্ডানের সাথেই আজীবন মেয়াদী চুক্তি আছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়াসামগ্রী নির্মাতা এই প্রতিষ্ঠানটির।

শুধু নাইকি নয়, এই ঘটনায় বিব্রত ও উদ্বিগ্ন রোনালদোর আরেক স্পনসর ‘ফিফা ভিডিও গেম‘ এর নির্মাতা ইএ স্পোর্টসও। এক বিবৃতিতে ইএ স্পোর্টস জানিয়েছে, ” আমরা নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। কারন আমরা চাই আমাদের তারকা অ্যাথলেট ও প্রতিনিধিরা এমনভাবে চলুন, যেটা ইএ এর মূল্যবোধের সাথে যায়।
এদিকে পোল্যান্ড আর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের জন্যে ঘোষিত পর্তুগাল দলে জায়গা হয় নি রোনালদোর। তবে সেটা এই ঘটনার জেরেই কিনা তা স্পষ্ট নয়। এই যেমন পর্তুগালের কোচ ফার্নান্দো সান্তোস তাঁর অধিনায়কের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ” ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার খেলোয়াড়দের সব সময় সমর্থন দেই। ও (রোনালদো) বিবৃতিতে যা বলেছে, সেটিই আমি বিশ্বাস করি। আমি ক্রিস্টিয়ানোকে চিনি এবং পুরোপুরি বিশ্বাস করি ও এমন অপরাধ কখনোই করবে না। “
রোনালদো অপরাধী কিনা সেটা ঠিক করাবে আদালত। তবে ক্যারিয়েরের এই পর্যায়ে এসে এমন একটা বিব্রতকর আর গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত রোনালদো যে সময়টা খুব উপভোগ করছেন না সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।