
অনেক নাটকীয়তার আভাস দিয়েও একপেশে ভাবেই শেষ হল দেশের ক্লাব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর। এবার আর মাঠের বাইরে দাপট দেখানোর জন্যে শিরোনাম হয়নি আবাহনী। মাঠের নির্ভেজাল আর দাপুটে পারফর্মেন্স দিয়েই এক মৌসুম পর শিরোপা পুনঃরূদ্ধার করলো ধানমন্ডির আকাশি-নীল শিবির। যদিও পুরো লিগ জুড়েই আম্পায়ারিং নিয়ে কোন না কোন দলের অভিযোগ ছিল। কিন্তু তারপরেও এবারের লিগ মাঠের খেলাতেই আলোচনায় ছিল বেশি।
লিগের শেষ রাউন্ডের আগের পয়েন্ট টেবিল ছিল অনেকটাই রহস্যে ঘেরা। চ্যাম্পিয়ন হতে পারতো তিন দল। কিন্তু হিসাবের হিসাব সব থাকলো ওই কাগজে কলমেই। মাঠের খেলায় আবাহনী ছাড়া আর বাকি কেউই শিরোপার দাবি করতে পারলো কই?
বিকেএসপিতে লিগের শেষ ম্যাচ রূপগঞ্জের বিপক্ষে টসে জিতে ব্যাট করতে নামে আবাহনী। এটা এক প্রকার ফাইলই ছিল দুইদলের কাছে। আর সেই ফাইনালের চাপ সামলে শুরু থেকেই আক্রমনাত্বক ভুমিকায় থাকে আবাহনীর দুই ওপেনার এনামুল আর নাজমুল। তাঁদের দুর্দান্ত শুরুটা এগিয়ে নিয়ে যান অধিনায়ক নাসির হোসেন আর ওপেনার নাজমুল। দুজনের সেঞ্চুরিতে ৩৭৪ রানের বিশাল স্কোর করে আবাহনী।

আসলে নাসিরের সেঞ্চুরিতে তাঁর ব্যাটের চেয়ে রুপগঞ্জের ফিল্ডারদেরই অবদানটা বেশি ছিল। ৭০ রানের মধ্যেই তাঁর তিন তিনটি সহজ ক্যাচ ফেলে ফিল্ডাররা। পরে তাঁর ৯১ বলে ১২৯ রানের ইনিংসের ১৫ চার আর ৪ ছক্কার মধ্যে অনেক এলোমেলো শটও ফিল্ডারদের কারনে সীমানা খুঁজে পায়। সেই তুলনায় নাজমুল হোসেন শান্তর ১০৭ বলে ১১৩ রানের ইনিংসের দুই ছক্কা আর ১১ চার অনেকটাই গুছানো ছিল। আর শেষ দিকে মাশরাফির ৪টি ছক্কা সহ ৭ বলে ২৮ রানের ক্যামিও আবাহনীর ইনিংসকে আরো সুদর্শন করে।
রান তাড়া করতে নেমে রূপগঞ্জও বেশ ভাল জবাবই দিচ্ছিল। অধিনায়ক নাঈম, ওপেনার মো নাঈম আর মুশফিকের ফিফটিতে এক পর্যায়ে ৪১ ওভারে ৪ উইকেটে ২৮০ রান ছিল তাঁদের। মাঠে আর মাঠের বাইরের সবাই যখন লিগের রোমাঞ্চকর এক সমাপ্তির কথা ভাবছে ঠিক তখনই পাঁচ বলের ব্যবধানে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে ২৮০ তেই থেমে যায় তাঁরা।
আর অন্যদিকে মিরপুরে শেখ জামালের শিরোপা প্রত্যাশার বেলুন ওড়ার আগেই ফুটো করে দেয় খেলাঘর। আগে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৬০ রানেই গুটিয়ে যায় শেখ জামাল। আর এই টার্গেট ৬ উইকেট হাতে রেখেই পার হয়ে যায় খেলাঘর। আর ফতুল্লায় গতবারের চ্যাম্পিয়ান গাজী গ্রুপকে এবারের লিগের সর্বনিম্ন ৯৫ রানে অল আউট করে লাঞ্চের আগেই ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে ৪র্থ অবস্থানে থেকে লিগ শেষ করে আগের তিন আসরের রানার্সআপরা।

এবার আসা যাক লিগের ব্যক্তিগত সেরাদের তালিকায়। রানের হিসেবে এবারের লিগ যথেষ্ট ভালই ছিল বলা যায়। আর এই ব্যক্তিগত রান সংগ্রাহকের তালিকায় জাতীয় দলের খেলোয়ার দের তুলনায় ব্রাত্য হয়ে পরা ব্যাটসম্যানরাই এগিয়ে ছিল। যদিও তামিম ইঞ্জুরিতে আর শাকিব-মাহমুদুল্লাহ পিএসএল নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তাঁদের এই হিসাবে না আনাই ভাল। তবে আগেই দল বাদ পরা আশরাফুলের ব্যাট হাতে পারফর্মেন্স ছিল বলার মত। টানা তিন সেঞ্চুরি সহ লিগের সর্বোচ্চ ৫ সেঞ্চুরি এসেছে তাঁরই ব্যাট থেকেই।
আর বোলারদের কথা বলতে গেলে তো মাশরাফিতেই এবারের সব আলোচনা থেমে যায়। লিগের সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড করে ১৬ ম্যাচে ৩৯ উইকেট নিয়েছেন ৩৬ বছরের ‘তরুণ’ মাশরাফি। মিলিত ভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা তিন বোলার থেকে তাঁর পার্থক্য ১০ উইকেটের।
শীর্ষ পাঁচ ব্যাটসম্যান:
নাম(দল) | ইনিংস | রান | সর্বোচ্চ | গড় | ১০০/৫০ |
নাজমুল হোসেন (আবাহনী) | ১৬ | ৭৪৯ | ১৫০* | ৫৭.৬১ | ৪/২ |
এনামুল হক বিজয় (আবাহনী) | ১৬ | ৭৪৪ | ১২৮ | ৪৯.৬০ | ২/৪ |
নাঈম ইসলাম (রুপগঞ্জ) | ১৫ | ৭২০ | ১১৬ | ৫৫.৩৮ | ১/৬ |
ফজলে রাব্বী (দেলেশ্বর) | ১৬ | ৭০৮ | ১২০ | ৪৭.২০ | ২/৩ |
মোহাম্মদ আশরাফুল (কলাবাগান) | ১৩ | ৬৬৫ | ১২৭ | ৬৬.৫০ | ৫/১ |
শীর্ষ পাঁচ বোলার:
নাম(দল) | ম্যাচ | উইকেট | সেরা | গড় | ৪/৫ |
মাশরাফি বিন মুর্তজা (আবাহনী) | ১৬ | ৩৯ | ৬/৪৪ | ১৪.৬১ | ২/২ |
আসিফ হাসান (রুপগঞ্জ) | ১৬ | ২৯ | ৪/২৩ | ২২.৬৫ | ১/০ |
মোহাম্মদ শহীদ (রুপগঞ্জ) | ১৬ | ২৯ | ৪/২৬ | ২৬.৫৫ | ২/০ |
ফারহাদ রেজা (দেলেশ্বর) | ১৬ | ২৯ | ৪/৩৭ | ২৬.৮৬ | ২/০ |
কাজী অনিক ( মোহামেডান) | ১১ | ২৮ | ৬/৪৯ | ১৯.১০ | ১/২ |