বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৮৭ জন টেস্ট খেলোয়াড়ের জন্ম দিয়েছে। এদের মধ্যে ১৯ নম্বর খেলোয়াড় মাশরাফি বিন মুর্তজা টেস্ট ক্যারিয়ারে এতটা সাফল্য অর্জন করতে পারেন নি, তবে দেশের ক্রিকেটে তাঁর অবদান অবিশ্বাস্য। কেউ কখনও টেস্ট ক্রিকেটের জন্য তার ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ করে নি। তবে এখন এই বিদায় বেলায় কিছু গুরুতর আঘাত তার টেস্ট ক্যারিয়ারকে নানা প্রশ্ন বাণে বিদ্ধ করছে।

২০০৯ সালে তাঁকে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচন করা হয়। তবে তাঁর কাছের বন্ধু “ইঞ্জুরি” তাঁকে একা রেখে বেশিদিন থাকতে পারলো না। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে তাঁর প্রথম এসাইনমেন্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেই ইঞ্জুরি তাঁর শরীরে আবার আঘাত হানে। এরপর আর কখনোই নিজ দেশের হয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে নামা হয় নি তাঁর। যদিও তিনি এখনো টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায়ের আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষনা দেন নি।
লাল-বল আর সাদা পোশাকের ক্রিকেটের আবেদনটাই এই অভিজ্ঞ যোদ্ধার কাছে সবসময়ই প্রথম পছন্দের। যদি তাই না হয় তবে কেন এই ফরম্যাটে ফেরার জন্য তিনি এখনও কঠোর পরিশ্রম করছেন? টেস্ট ক্রিকেট থেকে তাঁর নির্বাসনের কালের মধ্যেও তিনি সাম্প্রতিক সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে কয়েকটি চার দিনের প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছেন । তবে এর পেছনের মূল কারনটা আসলে টেস্টে নিয়মিত হওয়া নয়। তিনি আসলে তাঁর পছন্দের টেস্ট ক্রিকেটের বিদায়টা সরাসরি মাঠ থেকেই নিতে চান।
আর এখানে এই ব্যাপারটাই বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনের কাছে চড়ম আপত্তিজনক চাওয়া বলে মনে হচ্ছে।

খেলোয়াড়দের সম্পর্কে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে বিসিবি সভাপতি পাপন সবসময়ই অত্যন্ত কঠোর ও খোলামেলা। এই যেমন কয়েক দিন আগেও তিনি মুশফিকের অসাধারণ ইনিংস সম্পর্কে মন্তব্য করেন, “আমি আসলে জানতামই না ও এরকম ছয় মারতে পারে।“
একজন বোর্ড সভাপতির পক্ষে তাঁর খেলোয়াড়ের সামর্থ্য সম্পর্কে জনসম্মুখে সন্দেহ প্রকাশ করাটা কতটা হাস্যকর মনে হয় আপনার কাছে?
যেই মুহূর্তে সাবেক প্রধান কোচ হথুরূসিংহে তাঁর পদত্যাগের ঘোষণা দেন, তখনও পাপন সাহেব খোলাখুলিভাবেই এই পদত্যাগের জন্য সিনিয়র খেলোয়াড়দের দায়ী করেন। তবে মাশরাফিকে হথুরূসিংহের দাবির উপরই টি২০ থেকে অবসর নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। আসলে, মাশরাফিকে অধিনায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল। পরিবর্তে, আত্মসম্মানিত মাশরাফি টি২০ থেকেই অবসর নেওয়ার ঘোষণা দেন।
বিস্ময়করভাবে, গত বছরের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অবসর গ্রহণের পর তিনি বিপিএলে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন এবং এই বছরের ডিএলএলও তাই। আর তাঁর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর গ্রহনের পরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ আহামরি তেমন কিছু করতেও পারে নি।

যদিও দলের কঠিন সময়ে বোর্ড তাঁকে টি-টোয়েন্টি দলে একজন খেলোয়াড় হিসেবে চেয়েছিল, তবে মাশরাফি তার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধই ছিলেন। সম্ভবত, তিনি বোর্ড দ্বারা আবার নিক্ষিপ্ত হতে চান নি। তারপর জনাব পাপন বলেছিলেন, “আমাদের ধারণা, সে যদি ওয়ানডে খেলতে পারে টি-টোয়েন্টিও খেলা উচিত। ১০ ওভার যদি করতে পারে, ৪ ওভারও তার করা উচিত। এ কারণে তাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তখন সে আগ্রহ দেখায়নি। আমরা ধরে নিচ্ছি তার আগ্রহ নেই।”
এখন মাশরাফি যখন মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য টেস্ট স্কোয়াডে ফিরে আসার জন্য ইচ্ছা ব্যক্ত করছেন , তখন বিসিবি প্রধান আরও আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠে। তিনি বললেন, “কোথায়? কোন দেশে টেস্ট খেলবে সে? দেশের বাইরে?’
তিনি এখানে শেষ করেন নি, তারপর তিনি আরো যোগ করেছেন ‘সে কী হিসেবে আসতে চায়, ব্যাটসম্যান না বোলার? সেটা বড় প্রশ্ন।”

“প্রতিদিন ওকে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ ওভার বোলিং করতে হবে। ও বলছে পারবে? তাহলে তো আমাদের কিছু বলার নেই। ফিজিও যদি অনুমতি দেয়, আর ও যদি বলে পারবে তাহলে অবশ্যই স্বাগত জানাব। আমাদের কিন্তু সেই ধারণা নেই। যদি মনে করেন আমাদের দেশে খেলা, আমরা মাত্র ২ বা ৩ ওভার করাব… এখানে যদি খেলতে চায়, সেটা ভিন্ন বিষয়।”
আসলে কীভাবে দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাঁর নিজের দলের অধিনায়ক সম্পর্কে জনসমক্ষে এতটা ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারেন? যদি তিনি তা করেও থাকেন তবে কেন?
আমাদের কাছে আসলে এর কোন উত্তর নেই। তবে আমরা এটুকু নিশ্চিত করতে পারি যে, এটি দেশের ক্রিকেটের জন্য কোন ভাবেই ভাল কোন সংকেত বহন করে না।