আপনারা নিশ্চই সেই জাদুকরের কথা শুনেছেন যে জাদুর কাঠি দিয়ে তার আসেপাশের সব কিছু বদলে দিতে পারতো। শুধু বদলে দিতে পারতো বললে ভুল হবে, সে আসলে যে কোন কিছুকেই যা ইচ্ছা তাই বানাতে পারতো। কি ভাবছেন? আজগুবি কোন গল্প করে আপনাদের সময় নষ্ট করছি?

আসলে তা নয়। আজ আমরা কথা বলবো বাস্তব দুনিয়ার ফুটবলের এমনই এক জাদুকরের কথা যিনি তাঁর অদৃশ্যমান জাদুর কাঠি দিয়ে ফুটবল ইতিহাসে নিজেকে অমর করে ফেলেছেন ইতিমধ্যেই। খেলোয়াড় হিসেবে যতটা নয় তাঁর চেয়ে গুরু হিসেবেই তিনি বর্তমান ফুটবল দুনিয়ার এক উজ্জল তারকা। তিনি হলেন মাস্টার মাইন্ড পেপ গার্দিওলা।
আজকের গল্পের পুরোটা জুড়েই থাকছে এই জীবন্ত কিংবদন্তীর জীবনের নানা অংশের ঘন্ড চিত্র।

যাত্রা শুরুর গল্প
কাতালোনিয়ায় জন্ম নেয়া গার্দিওলা মাত্র তের বছর বয়সেই লা মেসিয়া তে বার্সার ইউথ একাডেমিতে যোগ দেন। ১৯৯০ সালে বার্সার যুবদল আর বি দলের মধ্যকার খেলা চলার সময়ই তিনি ইয়ান ডি ক্রুইফের নজরে পড়েন। টোটাল ফুটবলের জনক ডি ক্রইফের বার্সা ড্রিম টিমে শুরু থেকেই ছিলেন এই ফুটবল বিষ্ময়। মাত্র ২০ বছর বয়সেই ক্রুইফের ড্রিম টিমের মাঝ মাঠের অন্যত্ম প্রধান কান্ডারি হুয়ে ওঠেন গার্দিওলা।
ক্লাবের খেলোয়াড়ী জীবন
১৯৯০-৯১ এর চলতি মৌসুমেই মূল দলে সুযোগ পাওয়া গার্দিওলা প্রথম মৌসুমেই লা লিগা আর ইউরোপিয়ান কাপ দুটি শিরোপারই স্বাদ পান। তাঁর দল পরবর্তি দুই মৌসুমেও লা লিগার শিরোপা ধরে রাখে। কিন্তু গার্দিওলার আসল পরীক্ষা শুরু হয় ১৯৯৬ সালে ক্রইফ বার্সা ছেড়ে যাওয়ার পরে। ক্রুইফের শেষ দুই মৌসুমে ৩য় আর ৪র্থ হওয়া বার্সার দায়িত্ব নেন লুইস ফন গাল আর অধিনায়কত্ব বর্তায় গার্দিওলার উপরে।
নতুন ভুমিকায় এই নতুন জুটি আবারো অভাবনীয় সাফল্য এনে দেয় বার্সাকে। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে তিনটি সিরোপা জেতে বার্সা। পরের মৌসুমেও লিগ আর কাপ দুই ই জিতে নেয় বার্সা। মৌসুম শেষে রোমা থেকে তাঁর জন্যে ৩০০ মিলিয়ন স্প্যানিশ পেসেতাস এর প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় বার্সা। যদিও ইঞ্জুরির কারনে এই মৌসুমের বেশির ভাগ সময়টাই মাঠের বাইরে ছিলেন ক্যাপ্টেন গার্দিওলা। কিন্তু ১৯৯৯-০০ আরো এক মৌসুম ইনজুরি আর মাঠের বাইরেই বেশি সময় কাটে তাঁর।
২০০১ সালে লিগে ৪র্থ হওয়া বার্সায় আরো একটি হতাশাজনক মৌসুম কাটানোর পর ঐ বছরই এপ্রিলে ক্লাব ছাড়ার ঘোষনা দেন গার্দিওলা। বার্সেলোনায় শেষটা নিজের মন মতো না হলেও খেলোয়াড় গার্দিওলার বার্সায় কাটানো ১৭ বছরের ক্যারিয়ারটা যে চির স্মরনীয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
২০০১ সালে ইতালিয়ান ক্লাব ব্রেসসিয়াতে যোগ দেয়া গার্দিওলা তেমন একটা সুবিধা করতে না পেরে পরের মৌসুমেই রোমাতে যোগ দেন। ইতালিতে খেলোয়াড় গার্দিওলা তেমন সফল না হলেও ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে আলোচনায় আসেন। চার মাসের নিষেধাজ্ঞাও জারী হয় তাঁর উপরে। পরে অবশ্য ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে আপিল করে এই অভিযোগ থেকে মুক্ত হন।

২০০৩ সালে সবাইকে অবাক করে ম্যানইউ আর চেলসির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে কাতার লিগের দল আল আহলিতে যোগ দেন। ২০০৪-০৫ মৌসুমে দলকে আরব চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জয়ী আল আহলিতে গার্ডিওলার সময়টা বেশ ভালই কাটে।
পরে ২০০৬ সালে ম্যাক্সিকোতে কোচিং দিক্ষা নিতে গিয়ে যোগ দেন সেখানকার ক্লাব দারাদোস দে সিনালোয়া তে । আর এই ক্লাবেই ৬ মাস কাটিয়ে নিজের খেলোয়াড় জীবনের ইতি টানেন।
দ্যুতিহীন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার
স্পেনের হয়ে গার্দিওলার আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় ১৯৯২ সালে নর্দান আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে। ঐ একই বছর গার্দিওলা তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সাফল্য পান । নিজের শহরে অনুষ্ঠিত বার্সেলোনা অলেম্পিকে ফুটবল ইভেন্টে সোনা জেতে স্পেন।

আর ৯৪ এর বিশ্বকাপে ইতালির কাছে হেরে কোয়াটার ফাইনাল থেকেই বিদায় নেয় স্পেন, আর এটাই গার্দিওলার একমাত্র বিশ্বকাপ অভিযান। কারন ইঞ্জুরির কারনে ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ দলেই জায়গা হয়নি তাঁর। এমনকি ১৯৯৬ সালের ইউরো দলে সুযোগ না পাওয়া গার্দিওলা ২০০০ সালেই তাঁর একমাত্র ইউরোও খেলেন। লা রোহাদের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তেমন একটা সফলতা না পাওয়া গার্দিওলা ২০০১ সালে তাঁর মাত্র ৪৫ ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টেনে দেন।
এছাড়াও তিনি ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত কাতালোনিয়া ফুটবল দলের হয়ে ৭ টি প্রীতি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেন।
কি ভাবছেন? খেলোয়াড় গার্দিওলার জাদুর কাঠি তেমন একটা উপভোগ্য মনে হল না আপনাদের কাছে। আসলে সেটা উপভোগ করতে হলে আপনাকে গার্দিওলা পূর্ববর্তী বার্সা যুগেকে বিবেচনা করতে হবে। তবে কোচ গার্দিওলার জাদুতে মুগ্ধ হতে হলে আপনাকে আমাদের ২য় পর্ব পড়তে হবে।