দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার উপর দিয়ে তান্ডব চালাচ্ছে টাইফুন ‘ মাংখুত ‘। এর গতিপথে শ্রীলঙ্কা না থাকলেও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মরুময় আবহাওয়ায় অজানা টাইফুনেই আক্রান্ত শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল। আর তা না হলে, কেন তাঁরা বাংলাদেশ আর আফগানিস্তানের কাছে পরপর দুই ম্যাচে যাচ্ছেতাই ভাবে হেরে সবার আগে বিদায় নেবে এশিয়া কাপ থেকে!
প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে ১৩৭ রানে হারের পর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে ৯১ রানের বিশাল ব্যাবধানে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হল শ্রীলঙ্কাকে।

এশিয়া কাপ শুরুর আগেই শ্রীলঙ্কা দলে একের পর এক ইঞ্জুরি আগাত হানতে থাকে। ইঞ্জুরি সমস্যা ছাড়াও তাঁদের দলীয় পারফরমেন্সও ছিল ভাটির দিকে। এশিয়া কাপ খেলার উদ্দেশ্যে দুবাই আসার আগে তাঁরা ঘরের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ হেরে এসেছে দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে। আর এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচেই তাঁরা বাংলাদেশের কাছে ১৩৭ রানের বিশাল ব্যাবধানে হারে। আসলে ঐ ম্যাচে তাঁরা বাংলাদেশের সামনে দাড়াতেই পারেনি। এই হারে এমনিতেই বেশ চাপে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
এশিয়া কাপে টিকে থাকতে হলে যে কোন মূল্যেই আফগানদের হারাতেই হবে, এমনই এক সমীকরনের সামনে দাঁড়িয়ে আজ মাঠে নামে লঙ্কানরা। তাছাড়া পরিসংখ্যানও ছিল শ্রীলঙ্কার অনুকূলে। আজকের ম্যাচের আগ পর্যন্ত আফগানদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে কখনই হারে নি লঙ্কানরা। কিন্তু পরিসংখ্যানের হিসাব তো আর সবসময় কার্যকরী হয় না। সেটা আজকের ম্যাচে আরো একবার প্রমাণ হল।
এদিন ম্যাচের শুরুতে টসে জিতে ব্যাট করতে নামা আফগানিস্তানের ইনিংসের শুরুটা হয় বেশ ভাল ভাবেই। ওপেনিং জুটিতে ১১ ওভারে তাঁরা তে নেয় ৫৭ রান। এরপরে ওপেনার মোহাম্মদ সেহজাদের বিদায়ে ক্রিজে আসেন দলের নাম্বার থ্রি ব্যাটসম্যান রহমত শাহ্।
আরেক ওপেনার ইহসানুল্লাহ কে নিয়ে ৫০ রানের জুটি গড়েন তিনি। এরপরে দ্রুত সময়ের মধ্যেই আফগানিস্তান ইহসানুল্লাহ আর অধিনায়ক আজগর আফগানকে হারায়। হাসমতুল্লাহ শাহিদীকে নিয়ে এই বিপর্যয় সামল দেন রহমত শাহ। এই জুটিতে আরো ৮০ রান যোগ করেন তাঁরা।
৪২ তম ওভারে রাহমত শাহকে আউট করে এই জুটি ভাঙেন থিসারা পেরেরা। এই জুটির পরে নিয়মিত বিরতিতে আফগানদের উইকেট তুলে নিয়ে আফগানিস্তানের ইনিংস ২৪৯ রানেই থামিয়ে দেন থিসারা পেরেরা, সাথে ৫৫ রানে ৫ উইকেটও তুলে নেন তিনি। আর রহমত শাহ করেন আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ ৭২ রান।

আবুধাবি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শেষ ১৯ ম্যাচে ২৫০+ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ৩ ম্যাচে জিতেছে পরে ব্যাট করতে নামা দল। এই পরিসংখ্যান আর আগের ম্যাচের খারাপ ব্যাটিং ফর্ম এই ম্যাচের শুরুতেও বহাল থাকল শ্রীলঙ্কার জন্যে।
ইনিংসের প্রথম ওভারের ২য় বলেই মুজিবুর রহমানের বলে এলবিডাব্লিউ হন ওপেনার কুশাল মেন্ডিস। এরপরর শুরুর সেই বিপর্যয় সামাল দেন উপুল থারাঙ্গা আর ধানাঞ্জায়া ডি সিলভা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিতে দলীয় ৫৪ রানে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন ডি সিলভা। এই উইকেটের পরে নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারাতে থাকে শ্রীলঙ্কা।
শুধু ৩৫ রানের ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে লঙ্কানদের কিছুটা আশা দেখিয়েছিলেন ম্যাথিউস-থিসারা জুটি। কিন্তু দলীয় ১৪৩ রানে অধিনায়ক এঞ্জেলো ম্যাথিউসের বিদায়ের পর আর বেশিক্ষন স্থায়ী হয় নি লঙ্কানদের ইনিংস। ৪১.২ ওভারেই মাত্র ১৫৮ রানে গুটিয়ে যায় তারা।
লঙ্কানদের এই যাচ্ছেতাই ব্যাটিং পারফরমেন্সের দিনে উজ্জ্বল ছিলেন আফগানিস্তানের পুরো বোলিং ইউনিট। একমাত্র পেসার আফতাব আলম বাদে সবাই পেয়েছেন ২টি করে উইকেট। আর আউট ফিল্ডে আফগানদের ফিল্ডিংটাও ছিল দেখার মত। আসলে এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা সবদিক থেকেই আফগানদের কাছে বাজে ভাবে হেরেছে।
শ্রীলঙ্কানদের এই হারে বেশ ভালই হয়েছে বাংলাদেশের জন্যে। পয়েন্টের দিক থেকে গুরুত্বহীন হওয়ায় আফগানদের বিপক্ষে পরের ম্যাচে কিছুটা নির্ভার হয়ে মাঠে নামতে পারবে টাইগাররা। কিন্তু মাস চারেক আগেই টিটুয়েন্টিতে আফগানিস্তানের কাছে ধবলধোলাই হওয়া বাংলাদেশের কি নির্ভার থাকার কোন উপায় আছে?