শেষ হতে চলেছে আরও একটি এশিয়ান গেমস, কিন্তু বাংলাদেশের এশিয়ান গেমস এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। যেই দু একটা ইভেন্ট এ পদক পাওয়ার আশা ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু শূন্য হাতে দেশে ফেরার অপেক্ষা।

একমাত্র সাফ গেমস বাদে অন্য যেকোনো বৃহত্তর ক্রীড়া আসরে বাংলাদেশের জন্য পদক পাওয়াটা এক অঘটন হয়েই দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা পালেমবাংয়ে অনুষ্ঠিত এবারের এশিয়ান গেমসে সেই অঘটনও ঘটাতে পারলো না বাংলাদেশ। যদিও এশিয়ান গেমসের পর্দা নামছে ২রা সেপ্টেম্বর, কিন্তু তাতেও বাংলাদেশের পদক জয়ের আর কোনো আশা নেই।
যে কোন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসরে শুটিং ইভেন্টের মাধ্যমেই মাঝেমধ্যে খবরের শিরোনামে আসে লাল সবুজের পতাকা। তার উপরে আবার অলিম্পিক পদক জয়ের আশায় দীর্ঘমেয়াদে অনুশীলন করেছিল বাংলাদেশের শুটিং দলের খেলোয়াড়েরা।
কিন্তু কিসের কি! কমনওয়েলথ গেমসে রুপা জয়ী শুটার আব্দুল্লাহেল বাকী এখানে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে হয়েছেন ১৯ তম আর ১০ মিটার পিস্তলে শাকিল ২২ তম। এশিয়ান গেমসেই যখন এই দুরবস্থা তখন অলিম্পিক পদক তো এক অলীক স্বপ্নের নাম।

অন্তত একটি পদক জয়ের আশা ছিল মহিলা কাবাডি দল কে ঘিরে। কিন্তু গ্রুপ পর্ব থেকে সেমিফাইনালেই উঠতে ব্যর্থ মহিলা কাবাডি দল। চীনা তাইপের বিপক্ষে জয়ের আশা ছিল সবচেয়ে বেশি কিন্তু হেরেছে তাদের কাছেও। যেই কোরিয়াকে হারিয়ে গতবার জিতেছিল ব্রোঞ্জ, এবার হেরেছে তাদের কাছেও। আর ইরানের কাছে হার তো অনিবার্য ই ছিল। হিজাব পরা ইরানি মেয়েরা ভারতকে হারিয়ে জিতে নিয়েছে এই ইভেন্টের সোনা।
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত টিকে আছে ব্রিজ ইভেন্ট এ। প্রথম তিন ম্যাচ জিতে চতুর্থ রাউন্ডে ১১তম তে আছে বাংলাদেশ। তবে এখনো ৩ রাউন্ড বাকি, তাই পদক জয়ের আশাও কেউ তেমন একটা দেখছে না। আর গলফ ইভেন্টে সিদ্দিকুররা যে আহামরি কিছু করবেন সেটাও কেউ আশা করছে না।
অন্যদিকে অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো করেছে ফুটবল দল। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছে তারা। আর আর্চারিতে রিকার ইভেন্টে কোয়াটার ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন আর্চার রোমান সানা। হকিতে ওমান আর উজবেকিস্তানকে হারানোর পরে বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার কাছে হেরেছে বড় ব্যবধানে। তবে ওমান কে হারাতে পেরে কিছুটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে হকি ফেডারেশন।
কিন্তু এগুলো খুশি হওয়ার মতো পারফরম্যান্স হলেও পদক তালিকায় তো আর বাংলাদেশের নাম উঠছে না।
১৯৭৮ সালে প্রথমবারের মতো এশিয়ান গেমসে অংশ গ্রহণ করা বাংলাদেশে প্রথম দুই আসরেই ফেরে খালি হাতে। কিন্তু ১৯৮৬ সালে আশীর্বাদ হয়ে আসেন বক্সার মোশাররফ হোসেন। তার জেতা সেই ব্রোঞ্জপদক টিই এখন পর্যন্ত এশিয়ান গেমসের ব্যক্তিগত ইভেন্টে বাংলাদেশের একমাত্র পদক।

এরপরে ১৯৯০, ৯৪ এবং ২০০২ সালে তিনটি রুপা যেতে পুরুষ কাবাডি দল। আর ১৯৯৮ আর ২০০৬ সালে জেতে ব্রোঞ্জ। যদিও তখন পুরুষ কাবাডিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা একেবারেই কম ছিল। ২০১০ সালের গুয়াংজু এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম স্বর্ণ পদকটি জেতে পুরুষ ক্রিকেট দল, ২০১৪ তে ওই একই দলের কাছ থেকে আসে ব্রোঞ্জ। নারী ক্রিকেট দল জেতে রৌপ্য। কিন্তু এবারের আসরে নেই ক্রিকেট, তাই এই ইভেন্টে পদক জয়ের কোন প্রশ্নই আসে না।
পদক জিতুক আর জিতুক অলিম্পিকের মর্মবাণী “পদক নয়, অংশগ্রহণই বড় কথা” মেনেই সব বৃহত্তর ক্রীড়া আসরে অংশগ্রহণ করে চলছে বাংলাদেশ। কিন্তু এভাবে আর কত কাল? ৩২ বছর পর এশিয়ান গেমস থেকে শূন্য হাতে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ। এই লজ্জাজনক খবরটির পরেও কি টনক নড়বে না দেশের ক্রীড়া প্রশাসনের?