আমাকে বলুন, আপনি এই ধরনের হাই ভোল্টেজ ম্যাচ থেকে সাধারণত কি আশা করেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আপনাকে রিয়েল মাদ্রিদ বা বায়ার্ন মিউনিখ ফ্যান হতে হবে না, শুধু ফুটবলকে ভালবাসতে জানতে হবে।
গত রাতে আপনি কোন দলের সমর্থক ছিলন তা জানি না। তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত হল, গত রাতের খেলা আমার ফুটবল তৃষ্ণার্ত চোক্ষুদ্বয়কে সন্তুষ্ট করতে পারে নি। আমাকে ভুল ভাববেন না, আসলে ম্যাচের ফলাফল আমাকে একটুও পীড়া দেয় নি, উভয় পক্ষের বিশৃঙ্খল ফুটবলের প্রদর্শনি এর জন্যে দায়ী। আমি একটুও বাড়িয়ে বকছি না।

আমার কথায় বিশ্বাস না হলে চনুল কাল রাতে মাঠে কি কি ঘটেছিল তা একটু গভীর ভাবে দেখে আসি।
জার্মান দানব বায়ার্ন তাদের নিষ্প্রভ ফুটবল প্রদর্শনির জন্য ইঞ্জুরিকে দায়ী করতে পারে। এ ক্ষেত্রে, তাদের অভিযোগ অস্বীকার করা যাবে না। ইঞ্জুরি সংক্রান্ত কারনে তাঁরা ম্যাচে তিনজন বড় খেলোয়াড়কে হারিয়েছে, যার মধ্যে সর্ব প্রথম নামটি ছিল আরিয়ান রোবেনের। তিনি যখন পেশী সমস্যা জন্যে মাঠেই বসে পরেন, ম্যাচের বয়স তখন মাত্র ৬ মিনিট। পরে থিয়াগো অ্যালকান্তারাকে এই ডাচম্যানের বদলি হিসেবে নামানো হয়।
আর ৩৪তম মিনিটে জেরোম বোয়াটাং গোড়ালির আঘাত নিয়ে ধীর পায়ে টানেলে ফিরে যান। পরিস্থিতি আরো খারাপ হয় যখন সংঘর্ষ থেকে পাওয়া আঘাতের কারনে জাভি মার্টিনেজকে দ্বিতীয় অর্ধে মাঠ থেকে তুলে নিতে বাধ্য হন কোচ ইয়্যুপ হেইন্সক।

কিন্তু পুরো ম্যাচ জুড়েই লেভান্ডোওস্কির জঘন্য পারফরম্যান্সের কি ব্যাখ্যা হতে পারে? তিনি একের পর এক গোলের সহজতম সুযোগ নষ্ট করেছেন। রিবেরি মাঝে মধ্যে রিয়েলর বাক্সের মধ্যে বিদ্যমান জটলা ভাঙার কঠিন চেষ্টাও করেছেন, কিন্তু তাঁর কোন শটই প্রতিপক্ষের জালে ঠিকানা করে নিতে পারে নি। এই বিশেষ দিনে, তাঁদের মিডফিল্ডের অবস্থাও ছিল খুবই করুণ। পুরো ম্যাচ জুড়েই তাঁরা মিস পাসের পসরা সাজিয়ে রেখেছিল।
এই ভয়ঙ্কর মুহূর্তের সত্ত্বেও, ম্যাচের ৩৮তম মিনিটে বায়ার্নেকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেন যশওয়া কিমিচ। তিনি যখন বল নিয়ে ডান দিক দিয়ে রিয়ালের বক্সে ঢোকেন তখন রিবেরি ডান দিকে খালি জায়গা তার ক্রসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ক্রসের পরিবর্তে নিজেই রিয়ালের জালে এক বিদ্যুৎ গতির শট নেন এবং দলকে ম্যাচের প্রথম লিড এনে দেন।

তবে এই লিড খুব বেশি সময় স্থায়ী হয় নি, যখন মার্সেলো বায়ার্নের বক্সের বাইরে থেকে মাটি কামড়ানো শটে গোল করে বসেন। প্রকৃতপক্ষে, বলটি রোনালদোর উদ্দেশ্যে ক্রস করা হয়েছিল, যেটাতে তিনি বাইসাইকেল কিক করতে চেয়েছিলেন। তবে বল এবং তাঁর পজিশন কোনটাই ঐ শট নেওয়ার মত অবস্থায় ছিল না। আর এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে বল পেয়ে যান মার্সেলো। আর তাঁর নেয়া সেই শটেই প্রথমার্ধের বিরতির আগেই ম্যাচে সমতা ফেরায় রিয়াল।
দ্বিতীয়ার্ধে জিদান বেলের জায়গায় এসেন্সিওকে মাঠে নামান। আর অবাক করা বিষয় হল ম্যাচে এসেন্সিওর প্রথম পায়ের ছোঁয়াই ছিল ৫৬ মিনিটে করা রিয়ালের দ্বিতীয় গোলটি। আর তাঁর এই গোলটি ছিল বায়ার্ন ডিফেন্সের মারাত্মক ভুলের মাশুল। রিয়ালের হঠাৎ উঠে আসা একটি পাল্টা আক্রমণের সময় এসেন্সিওকে মার্ক করতে ভুলে যান বায়ার্ন ডিফেন্ডারেরা।
বায়ার্নের বিপদসীমার সামনে যখন তিনি বল পান ততক্ষনে তাঁর সামনে পরাস্ত করার জন্যে গোল কিপার ছাড়া আর কেউই ছিল না। আর রিয়াল মাদ্রিদের ভবিষ্যতের তারকার জন্যে এটা তেমন কঠিন কিছু ছিল না।

যদিও রিয়াল মাদ্রিদের এই ম্যাচটি জিতে তাঁদের টানা ৩য় চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের দিকে একধাপ এগিয়ে গেছে, তবে তাঁরা তাঁদের প্রকৃত মানের চেয়ে অনেক পিছিয়েই ছিল এদিন। রোনালদো অনেক সহজ কিছু সুযোগ মিস করার পাশাপাশি এমন একটি গোল দাবি করেন যেটাতে তিনি বল রিসিভের কাজটা স্পষ্টভাবেই তার বাম বাহু দিয়ে করেছিলেন। এদিন তাঁদের মিডফিল্ডের অবস্থাও করুণ ছিল।
সম্ভবত, এই বিশৃঙ্খল ফুটবল প্রদর্শনীর দ্বারা মাঠের দর্শকরাও প্রভাবিত হয়েছিলেন। আলিয়েন্জ এরিনার স্বাভাবিক উৎসবমূখর দর্শকেরাও এদিন তেমন একটা আবেগপ্রবণ ছিলেন না।
সে যাই হোক, দিনের শেষে সবাই এটাই মনে রাখবে যে রিয়াল প্রথম লেগ জিতে টানা তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালের দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেল। কিন্তু, কমপক্ষে আমরা দর্শকেরা দ্বিতীয় লেগে এই দুটি অসাধারণ দলের কাছ থেকে একটি ভাল ফুটবল শো আশা করতেই পারি।