গত রাতে আনফিল্ডের লিভারপুল-রোমা ম্যাচটি আসলে মিসরীয় ফুটবল সম্রাট সালাহ এবং বাকি রোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে একটি যুদ্ধ ছিল। আর যেটিতে রোমানরা লিভারপুলের মিশরীয় রাজা সালাহ দ্বারা ধ্বংস হয়ে যায়। রোমাকে একটি বড় পরাজয়ের সঙ্গে করেই ঘরে ফিরতে হচ্ছে, কিন্তু আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল তাঁদের জন্যে আশা জাগানিয়া হিসেবে থাকছে প্রতিপক্ষের মাঠে পাওয়া দুটি গোল।

৩৪ বছর আগে লিভারপুল এবং রোমা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের (তৎকালীন ইউরোপিয়ান কাপ) নক আউট পর্বে শেষ বারের মত মুখোমুখি হয়েছিল। সেই ফাইনালে রোমা টাই-ব্রেকারের হেরে যায়। তারপর থেকে, এটিই তাদের দ্বিতীয় সেমি ফাইনালে পৌঁছানো।
অ্যানফিল্ডে এই পুরো মৌসুমে জুড়েই লিভারপুল দুর্দান্ত ছিল। কিন্তু, কোয়াটার ফাইনালে বার্সার বিপক্ষে অসম্ভব প্রত্যাবর্তন করার পর রোমের কাছ থেকেও সবাই একটি উত্তেজনাপূর্ণ লড়াই আশা করেছিল।

ম্যাচের শুরু থেকেই লিভারপুলের মিশরীয় বিষ্ময় মোহাম্মেদ সালাহর উপরেই স্পটলাইট থাকার কথা ছিল। এবং এটি ছিলও তাই। সালাহ ম্যাচের ৩৬ তম মিনিটে স্কোরশীটে আধিপত্য শুরু করেন। তাঁর বাম পায়ের অত্যাশ্চর্য শট রোমার উপরের পোস্টের ডান কোণে জায়গা করে নেয়। খুব সম্ভবত, রোমা ডিফেন্সের কেউই ঐ মুহুর্তে তাঁর কাছ ঐ আকস্মিক শটটি আশা করেনি।
লিভারপুলের পরের গোলটি আসে প্রথম অর্ধেকের অতিরিক্ত সময়ে একটি চমৎকার পাল্টা আক্রমণ থেকে। যেটি আসলে সালাহ-ফিরমিনো জুটির একটি সম্ননিত প্রয়াস। ফিরমিনো মাঝ মাঠে একটি লং বল রিসিভ করেন, যা মূলত তাদের বক্স থেকে ক্লিয়ার করা হয়েছিল। তারপর তিনি সালাহকে এটি পাস করেন, সালাহ আবার ফিরমিনোকে ফিরতি পাস দিয়ে তিনজন রোমা ডিফেন্ডারের মধ্যে দিয়ে আড়াআড়ি দৌড় দেন।
অবশেষে, সালাহ যখন বক্সের সামনে ফিরমিনোর কাছে থেকে বলটি ফেরত পান, ততক্ষনে তাঁর সামনে গোলরক্ষক একা। গোলরক্ষককে পাশ কাটিয়ে বলটি ঠেলে দেন রোমের পোস্টে নিচের বাম কোনায়।

গোল দুটি করার পরে তাঁর তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া ছিল সাবেক দলের প্রতি অসাধারণ বিনয়ের এক উদাহরণ। তিনি তাঁর উভয় হাত উপরে তুলে এমন ভঙ্গি করেন যে, তিনি একটু আগেই যা করেছেন সেটার জন্যে ক্ষমা প্রার্থী। প্রকৃতপক্ষে, তিনি তার কোনো গোলই উদযাপন করেননি।
দ্বিতীয়ার্ধে, সালাহ তার দলের জন্য কারিগরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। দলের ৩য় এবং ৪র্থ গোল দুটিই তাঁর গোল করানোর সামর্থ্যের গল্পই ছিল। ৫৬তম মিনিটে, মো সালাহ রোমার বক্সের বাম দিক থেকে বল নিয়ে দৌড়ে ঢোকেন এবং বাম পোস্ট থেকে ডান পোস্টে নিখুঁত ভাবে মাইনাস করেন। বলটি রোমার জালে ঠেলে বাকি কাজটুকু সম্পন্ন করেন স্যাদিও মেনে।

৬১তম মিনিটে চতুর্থ গোলের দৃশ্যটিও ছিল প্রায় ৩য় টির কপি-পেস্ট। কিন্তু এই ক্ষেত্রে, গোলদাতা ছিলেন ফিরমিনো। ফিরমিনো তার দ্বিতীয় এবং দলের ৫ম গোলটি করেন ৬৮ তম মিনিটে কর্নার কিক থেকে আশা বলে নিখুঁত এক হেডে। আর এক্ষেত্রে কর্নার কিকটি সালাহর পরিবর্তে মিলনার করেন।

ঐ মুহূর্তে রোমা ভক্তদের হৃদয়ে কি চলছিল তা গ্যালারিতে বসে থাকা রোমার অলটাইম গ্রেট টোট্ট্রির মুখের অভিব্যক্তি থেকেই অনুমান করে নেয়া সম্ভব।
মায়চের ৮১ তম মিনিটে রোমার জন্যে সবচেয়ে ইতিবাচক ঘটনাটি ঘটে, যখন এডিন জেকো তাঁর দলকে প্রথম এওয়ে গোল এনে দেন। আর ৮৫তম মিনিটে কেররোভের শট লিভারপুলের বক্সের মধ্যে মিলনারের হাতে লাগার সাথে সাথেই সরাসরি পেনাল্টি পায় রোমা। ডিয়েগো পেরোত্তি পেনাল্টি থেকে মহা বিপর্যয়ের এই ম্যচের মধ্যেও দলকে প্রতিপক্ষের মাঠে দ্বিতীয় গোল এনে দেন।

কেন আমরা এই গোলকে এতটা গুরুত্বপূর্ণ বলছি? আমার মনে হয় না, বার্সার বিরুদ্ধে তাদের বীরত্বপূর্ণ অর্জনটি এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই আপনার স্মৃতি থেকে মুছে গেছে । সুতরাং, তাঁদের সামনে সমীকরণটি খুব সহজ। ঘরের মাঠে লিভারপুলকে কমপক্ষে ৪-০ গোলে হারাতে হবে, অন্যথায় এবারের মত সেমি ফাইনাল পর্যন্ত যাত্রা নিয়েই সন্তষ্ট থাকতে হবে। আর লিভারপুল যেভাবে খেলছে তাতে রোমার করনীয় কাজটা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু কে জানে, দ্বিতীয় লেগে কি অপেক্ষা করছে?