১৬ বছর বয়সে যখন প্রথম গ্র্যান্ড হিসেবে ইউএস ওপেনে জয়লাভ করেন সেরেনা উইলিয়ামস নাউমি ওসাকার বয়স তখন দুই বছরেরও কম। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই সেরেনা তার আদর্শ।
টেলিভিশনে তার খেলা দেখেই বেড়ে উঠেছেন নাওমী। তখন থেকেই মনের মধ্যে একটা ইচ্ছা পুষে রাখা কোন একদিন গ্র্যান্ডস্লামের ফাইনাল খেলবে। সেটা যে এত আগেভাগেই হয়ে যাবে ওসাকা এখনও ভাবতে পারেননি। তাই আজ ফাইনাল এর আগেও কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ওসাকা।

সেমিফাইনালে আমেরিকার ম্যাডিসন কিসকে ৬-২, ৬-৪, হারিয়ে সেরেনার সঙ্গে ফাইনাল নিশ্চিত করার পর ২০ বছর বয়সি ওসাকা বলেন, ” আমার কাছে এখনো এটা পরাবাস্তব মনে হচ্ছে। যখন আমি শিশু ছিলাম তখন থেকে স্বপ্ন দেখে এসেছি সেনার সঙ্গে এক দিন গ্র্যান্ডস্লামের ফাইনাল খেলব। সত্যিটা হলো এটা এবার ঘটতে চলেছে এবং আমি খুব খুশি।”
এই খুশিতে ফাইনালের শেষে ধরে রাখতে চান বিশ্ব টেনিসে জাপানের নতুন তারকা। আর তাইতো আজ ফাইনালে কে তার প্রতিপক্ষ সেটি ভুলেই খেলতে চান নিজের খেলাটা। তিনি বলেন আমি এটাও ভাবছি এই মুহূর্তটা আমার উপভোগ করা উচিত এবং এটাকে অন্য একটা ম্যাচের মতোই ভাবা উচিত আমার। এর পাশাপাশি এটাও সত্যি যে সেরেনাকে আমার পছন্দের খেলোয়াড় এবং আমার আদর্শ হিসেবে আজকে ভাবাটা উচিৎ হবে না। আর দশজন প্রতিপক্ষের মতোই তার বিপক্ষে খেলার চেষ্টা থাকবে আমার।

ইউএস ওপেনে ছয়টি শিরোপা জিতেছেন সেরেনা। নবম বারের মতো খেলতে যাচ্ছেন ফাইনাল। আর প্রথমবারের মত গ্র্যান্ডস্লামের চতুর্থ রাউন্ডে উঠে ওসাকা তার স্বপ্নযাত্রা টেনে নিয়েছেন ফাইনালে। আর তাই ফাইনালে সবার ফেভারিট হিসেবে থাকছেন সেরেনা।
মা হওয়ার পর টেনিসের ফেরা সেরেনাকে এই টুর্নামেন্টে প্রথম অপ্রতিরোধ্য লাগছে। সেমিফাইনালের কথা ধরা যাক আনাস্তাসিয়াকে কোনো সুযোগ দেননি সেরেনা। ৬৬ মিনিটে সরাসরি সেটে হারিয়ে দিয়েছেন ৬-৩, ৬-০ গেমে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেও যে জড়তা এবং ঘাটতি ছিল ম্যাচ প্র্যাকটিসে সেটি এই ম্যাচে কোথায় যেন উধাও হয়ে গিয়েছে। ছন্দে ফিরে এসেছেন বলে তরতর করে উঠে এসেছেন ফাইনালে সবমিলিয়ে আজকের ফাইনালে সেরেনা ফেভারেট।
তাই বলে কি আশা নেই ওসাকার? অবশ্যই আছে। ওসাকা উল্টো দাবি করতে পারেন যে তাকে সেরেনা কখনো হারায় নি উল্টো তিনি সেরেনাকে হারিয়েছেন। এই পর্যন্ত একবারই একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছেন। গত মার্চে মায়ামি ওপেনে ওসাকা ৬-৩, ৬-২গেমে ২৩ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যামউইনার কে হারিয়েছেন। সেটির সুখময় স্মৃতি আজকের গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনালে তাকে উৎসাহ জোগাবে।

আজ সেরেনা তার ২৪ তম গ্র্যান্ডস্ল্যাম শিরোপা জিতলে মার্গারেট কোর্ট কে ছুয়ে ফেলবেন। ক্রিস এভার্ট কে ছাড়িয়ে উন্মুক্ত যুগে সবচেয়ে বেশি সাতটি শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়বেন। সর্বোপরি ইভোনগুলাগং, কিম ক্লাইস্টার্স এর পর হবেন গ্র্যান্ডস্লাম জয়ী প্রথম মা।
৩৬ বছর বয়সী ডানহাতি খেলোয়াড় ক্যারিয়ার শুরু করেন ১৯৯৫ সালে। র্যাংকিং এ ছাব্বিশে থাকা সেরেনা উইলিয়ামস এখন পর্যন্ত ৭৯৫ বার খেলেছেন, জয়লাভ করেছেন ১২৫ বার এবং ১৭২ টি শিরোপা অর্জন করেছেন যার মধ্যে ২৩ বার তিনি গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা অর্জন করেন। অপরদিকে ২০ বছর বয়সী ওসাকা ২০১৩ সালে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। র্যাংকিং এ ১৯ এ থাকা এই খেলোয়াড় এখন পর্যন্ত ১৬৩ বার জয়লাভ করেছেন হেরেছেন ১১৪ বার। গ্র্যান্ডস্লামের শিরোপা তিনি এখন পর্যন্ত অর্জন করতে পারেননি।
এতসব কিছুর পরও বাস্তবতা ভুলে যাননি। মায়ামি ওপেনের সেই সেরেনা, আরএই সেরেনার মধ্যে অনেক তফাৎ। ম্যাচ হারার পর সোরেনা বলেছিলেন অবশ্যই আমি আমার সেরা ছন্দে ছিলাম না। কিন্তু এখন তিনি আবার ছন্দে ফিরে এসেছেন। তবে তা নিয়ে নির্বিকার ওসাকা। ওসাকা জানেন সেরেনা সেরা এবং গুণমুগ্ধ এবং খুব ভালো খেলোয়াড়। ফাইনালে তিনি ভালো কিংবা খারাপ খেলুন তাতে আমি বিস্মিত হতে চাচ্ছি না।