চলছে ইংল্যান্ড বনাম ভারত এর টেস্ট সিরিজ। ৫ ম্যাচের সিরিজে সবে মাত্র দুই টেস্ট শেষ হয়েছে। কিন্তু এই দুই টেস্টেই ব্যাটিং ব্যর্থতায় যাচ্ছেতাই ভাবে হেরেছে ভারত। বিশেষ করে সর্বশেষ লর্ডস টেস্টে ব্যাটসম্যানদের অসহায় আত্নসমর্পনের কারনে ইনিংস ব্যবধানে হারে তাঁরা। আর এতেই চারদিক থেকে সমালোচনা তীর ধেয়ে আসতে থাকে আইসিসির বর্তমান টেস্ট র্যাংকিং এর নাম্বার ওয়ান দল ভারতের দিকে।
ভারতের এবারের ইংল্যান্ড সফরটা শুরু হয় ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় দিয়ে। কিন্তু ওই ওখানেই শেষ হয় কোহলি বাহিনীর জয়যাত্রা। এর পরের দুই ম্যাচ জিতে ওয়ানডে সিরিজ নিজেদের করে নেয় স্বাগতিক ইংল্যান্ড।
আর গত ৮৬ বছরে ইংল্যান্ডের মাটিতে ১৭ টি টেস্ট সিরিজ খেলে মাত্র ৩ সিরিজে জয়ী দল ভারতের জন্যে যে টেস্ট সিরিজটা কঠিন হবে তা আন্দাজ করাটা খুব কঠিন কিছু ছিল না। কিন্তু টেস্ট র্যাংকিং এর এক নাম্বার দল ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ যে এভাবে ব্যর্থ হবে সেটা মেনে নিতে পারেন নি সে দেশের মিডিয়া আর সাবেক খেলোয়াড়েরা।

ভারতের এই পারফর্মেন্স যে কতটা হতাশা দায়ক তা বোঝা যায় ‘টাইমস অব ইন্ডিয়ার’ শিরোনাম থেকেই। ম্যাচ হারার পর তারা শিরোনাম করেছে “লর্ডসে ভিখারী ভারত”।
এই শিরোনামের জন্য যে সংবাদপত্রটিকে মোটেও দোষ দেওয়াও যায় না। কারন সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে মাত্র ১৬.৮২ রানে একটি করে উইকেট হারিয়েছে ভারত। আর প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে অধিনায়ক কোহলির অসাধারণ সেঞ্চুরি বাদ দিলে সিরিজে ভারতের ব্যাটসম্যানদের কোন অবদান নেই বললেই চলে।
সাবেক ভারতীয় ওপেনার ভিরেন্দ্র শেহওয়াগ ম্যাচের শেষে টুইট করেন,
“ভারত খুবই বাজে করেছে, দল যখন খারাপ করে আমরা সব সময়ই তাদের সমর্থন করি এবং পাশে থাকি। কিন্তু এভাবে বিনা লড়াইতে হেরে যাওয়া দেখাটা খুবই হতাশাজনক। আশাকরি তাদের ফিরে আশার মত যথেষ্ট আত্নবিশ্বাস ও মানসিক শক্তি আছে।”
আরেক সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার মোহাম্মদ কাইফ টুইট করেন,
“দুই ইনিংস শেষ হল মাত্র ৮২ ওভারে। এটা খুবই হতাশাজনক যে তারা (ব্যাটসম্যানরা) ভুল থেকে শিখছে না। আর এই ম্যাচে তো সব বিভাগেই পরাজিত হয়েছে দল।”

তবে এসব সমালোচনা মাথা পেতেই নিয়েছেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। কোন রকম অজুহাত দাড় না করিয়ে তিনি বলেন,
“আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে দেশের জন্য খেলা। আমাদের এর চেয়ে ভাল খেলা দরকার ছিল। এটা মেনে না নিলে উন্নতি করা সম্ভব না, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাও সম্ভব না। যেহেতু ভুল করেছি সেটা মেনে নিতেই হবে। ভুল তো হতেই পারে, গুরুত্ব হচ্ছে ওগুলোর পুনরাবৃত্তি না করা।
ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের আত্নবিশ্বাস যখন তলানিতে ঠেকেছে, তখন ইংলিশ মিডিয়াও ভারতকে ধবলধোলাই এর ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠেছে। অবশ্য এই ব্যাপারে বেশ সতর্ক ইংলিশ অধিনায়ক জো রুট। এই রকম এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,
” অবশ্যই, এটাই তো স্বপ্ন হওয়া উচিত। পাঁচটি পরিপূর্ণ পারফরমেন্স, পাঁচটি জয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ হলো আত্নতুষ্টিতে না ভোগা, ঔদ্ধত্য না দেখানো আর বেশি দূরে চোখ না রাখা।পরে তিনি আরো যোগ করেন ” আমরা বিশ্বের এক নাম্বার দলের বিপক্ষে খেলছি। ওদের প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের অভাব নেই। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে উন্নতির ধারাটা যেন বজায় থাকে।”

এখন দেখার বিষয় এটাই যে, এত সব আলোচনা আর সমালোচনা সামলে কতটা ঘুরে দাড়াতে পারে বিধ্বস্ত ভারত শিবির। অবশ্য নিজেদের একাট্টা করার জন্যে ভালই কয়েক দিন সময় পাচ্ছে তারা। আগামি ১৮ই আগস্ট এজবাস্টনে শুরু হতে যাচ্ছে সিরিজের তৃতীয় টেস্ট।