আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল, এমন একটি ম্যাচ যা কখনও ‘আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ’ হিসাবে বিবেচনা করা যায় না। এই ম্যাচ সবসময়ই একটি প্রীতি ম্যাচের থেকে অনেক বড় কিছু।

প্রকৃতপক্ষে, দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল বিশ্বের যে প্রান্তে যেই ম্যাচই খেলুক না কেন, সেটাকে প্রীতি ম্যাচ হিসেবে বিবেচনা করতে হলে আপনাকে অন্তত দুবার ভাবতেই হবে।
ভেন্যু এবং কিক-অফের সময়
প্রতিযোগিতা: আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ
স্থান: কিং আব্দুল্লাহ স্পোর্টস, জেদ্দা
কিক-অফ: বাংলাদেশ সময় রাত ১২
কেন সৌদিতে?
এদিকে, ইউরোপীয় ফুটবল যখন ‘নিরর্থক’ প্রীতি ম্যাচ হ্রাস করার জন্য উয়েফা নেশনস লিগে ফোকাস করছে, তখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল মধ্যপ্রাচ্যের ভক্তদের বিনোদনের জন্য সৌদি আরব সফর করছে। বিষয়টা যে কারো কাছেই অদ্ভুত লাগতে পারে, তবে এর পেছনে এক বিশাল অর্থনৈতিক কারন রয়েছে।
আক্ষরিক অর্থে, নিজেদের ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রার অংশ হিসাবে সৌদি সরকার তেলের উপর তাদের নির্ভরতা কমাতে চায় এবং অর্থনীতির বৈচিত্র্য বাড়াতে চায়। তারা পর্যটন খাতের মাধ্যমে তাঁদের অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলতে চায়। এই কারনেই তারা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষনে এই ধরণের বড় মাপের আয়োজন করে আসছে। এমনকি সৌদি আরব তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসাবে সাম্প্রতিক সময়ে দুটি ডাব্লিউ ডাব্লিউ ই রেসলিং ইভেন্টের আয়োজন করেছিল।
পূর্ব পর্যালোচনা
২০১৮ সালের রাশিয়ার বিশ্বকাপে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর, উভয় দলই সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি সহজ প্রীতি ম্যাচ দিয়েই নিজেদের আন্তর্জাতিক ফুটবল চালিয়ে যাচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে অবশ্য ব্রাজিল কোচ তিতের শিষ্যরা লা অ্যালবিলিস্তেদের থেকে একটু এগিয়েই আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এল সালভাডর এবং সৌদি আরবের বিরুদ্ধে জয় পেয়েছে সেলেসাওরা। আর আর্জেন্টিনা গুয়াতেমালা এবং ইরাকের মত দলের বিপক্ষে বড় জয় পেলেও কলোম্বিয়ার বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করে।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালে সেলেসাওদের সাফল্যের হারও লা অ্যালিবিসেলস্তেদের থেকে অনেক এগিয়ে। ব্রাজিল ২০১৮ সালে মোট ১৩ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের মধ্যে ১১ টিতেই জিতেছে। আর আর্জেন্টিনা তাঁদের খেলা ১০ টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র ৫ টিতে জিততে পেরেছে।
সে যাই হোক, মঙ্গলবারের ম্যাচটি এই দুই দলের মধ্যে ১০৯ তম আন্তর্জাতিক লড়াই। হেড-টু-হেড ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাজিল ৪৪ টি ম্যাচ জিতে কিছুটা এগিয়ে আছে এবং আর্জেন্টিনা জিতেছে ৩৯ টি ম্যাচে আর অন্য ২৫ ম্যাচ ড্র হয়েছে।
আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আর্জেন্টিনার আন্তর্জাতিক ফুটবলে লিওনেল মেসির অনির্দিষ্টকালের অবসর নেওয়ার পর পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলছে। যদিও মেসি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও ঘোষণা দেন নি, তবে খুব শীঘ্রই তিনি আর্জেন্টিনার জাতীয় দলে ফিরবেন বলে খুব একটা আশা করা যাচ্ছে না। তবে আগামী জুনে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হতে চলা ২০১৯ কোপা আমেরিকা দিয়ে আর্জেন্টিনা প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে ফিরলে মেসির আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও উজ্জ্বল হতে পারে।
এই সত্ত্বেও, ইরাকে ৪-০ ব্যবধানে হারানো ম্যাচের পরে আর্জেন্টিনা দলে নতুন করে কারো কোন ইঞ্জুরির সমস্যা নেই। ইরাকের বিপক্ষে মাঠে না নামলেও এই ম্যাচে শুরু থেকেই মাঠে থাকবেন ইন্টার মিলান স্ট্রাইকার মাউরো ইকার্দি। আর তার সঙ্গী হিসেবে তাঁরই ক্লাব সতীর্থ লাতারো মার্টিনেজকেও ম্যাচের শুরুতেই দেখা যেতে পারে।

অন্য দিকে, বিশ্বকাপে প্রত্যাশিত ফলাফল এনে দিতে না পারা সেই একই খেলোয়াড়দের নিয়ে এগিয়ে চলছেন ব্রাজিল বস তিতে। প্রকৃতপক্ষে, সেলেসাওদের পুরো দলকে আবারো নতুন করে ঢেলে সাজনোর কোন দরকার নেই। কারন তাঁদের দলে এমন সব পরীক্ষিত আন্তর্জাতিক তারকা আছে যাদের সামর্থ্য নিয়ে কোন আমলেই কোন প্রশ্ন ছিল না। আর নিজেদেরকে আবারও বিশ্বব্যাপী অভিজাত দল গুলোর সামিল করার জন্য ব্রাজিলকে তাঁদের হারানো ছন্দ ফিরে পেতে হবে। আর নিজেদের আত্নবিশ্বাসের লেভলটা আরো উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্রাজিলের সবচেয়ে ভাল সুযোগ থাকছে এই ম্যাচেই।
উপরন্তু, ব্রাজিলের ভক্তরা এই ভেবে একটু নিচিন্ত হতে পারে যে তাদের স্কোয়াডেও নতুন কোন ইঞ্জুরির সমস্যা নেই। তাই আর্জেন্টিনার উপরে পূর্নশক্তির ব্রাজিল দল নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ার সুযোগ থাকছে ব্রাজিল কোচ তিতের সামনে।
ব্রাজিলের সম্ভাব্য একাদশ: অ্যালিসন (জি কে); অ্যালেক্স স্যান্ড্রো, পাবলো, মারকুইনস, মার্সেলো; ক্যাসেমিরো, রেনাটো অগাস্টো, ফ্রেড, গ্যাব্রিয়েল জেসস, নেইমার, কোতিনহো।
আর্জেন্টিনা সম্ভাব্য একাদশ: রোমেরো (জি কে); সারভিয়া, পেজেলা, ওটামেন্ডি, টগলিফিকো; প্যারেডেস, লো সেলসো, প্যালাসিওস; দিবালা, সিমোন, ইকার্ডি।
বেটিং অডস
ব্রাজিলের জয়ের পক্ষে বাজির দর ৮/১৩
নেইমার ম্যাচের প্রথম গোলদাতা, এটির পক্ষে বাজির দর ৩/১
মাউরো ইকার্দি ম্যাচের যে কোন সময়েই গোল করবেন, এটির দর ১১/৪