বাংলাদেশের প্রাণ সাকিব আল হাসান মাগুরা জেলায় ১৯৮৭ সালের ২৪ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। ছোট বেলা থেকেই ক্রিকেটে ও ফুটবলে সমান দক্ষ ছিলেন সাকিব। নিজ এলাকার বিভিন্ন গ্রামের হয়ে নিয়মিতই মাঠ মাতাতেন বাংলার ক্রিকেটের এই রত্ন।
এরকমই একদিন একটি ম্যাচ খেলাকালীন একজন আম্পায়ার তার খেলা দেখে খুবই অবাক হন এবং ইসলামপুর পাড়া ক্লাবের হয় লীগ ক্রিকেটে অনুশীলন করার জন্য সাকিবকে ব্যবস্থা করে দেন। অনুশীলন চলাকালীন সাকিব খুব দ্রুত ব্যাটিং করতেন এবং ফাস্ট বল করতেন। মাঝেমধ্যে তিনি স্পিন বলের জন্য চেষ্টা করতেন কিন্তু খুব বেশি একটাভাল হত না তার সেই স্পিন বল।

পরবর্তীতে তিনি ইসলামপুর ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট খেলার সুযোগ পান এবং খেলার প্রথম দিনেই তার প্রথম বলে তিনি একটি উইকেট শিকার করেন। এটি ছিল আসল ক্রিকেট বল দিয়ে করা তার প্রথম ডেলিভারি। কারণ এর আগ পর্যন্ত তিনি যত জায়গায় ক্রিকেট খেলেছিলেন সেটা ছিল টেপ টেনিস বলে।
পরবর্তীতে তিনি ৬ মাস বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপি তে অনুশীলন করেন। এবং এরপর সেখান থেকে ২০০৪ সালে ১৭বছর বয়সে তিনি খুলনার বিভাগের পক্ষে ঘরোয়া লীগে যাত্রা শুরু করেন।
সেই সাকিব আল হাসান গতকাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক যুগ পাড় করলেন। ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল বর্তমানে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের। এরই মধ্যে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে ৩১০ ম্যাচ খেলে করেছেন ১০ হাজার ৪৯৩ রান, উইকেট নিয়েছেন ৫১৩ টি বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই জীবন্ত কিংবদন্তি।

ব্যাটিং বোলিং ও আগ্রাসী মনোভাব বাংলাদেশের ক্রিকেটের চিত্রটাই পাল্টে দিয়েছেন তিনি। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান তার ক্যারিয়ারের এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি স্মরণীয় করে রাখলেন।
ক্যারিয়ারের শুরুটা ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট। জিম্বাবুয়ের হারারেতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দিয়ে অভিষেক হয় সাকিব আল হাসানের। প্রথম ম্যাচেই সেদিন নিজের আগমনের জানান দিয়েছিলেন তিনি ১০ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে ১ উইকেটও ৩০ রানে অপরাজিত থেকে দলকে এনে দিয়েছিলেন ৮ উইকেটের জয়।
সেই থেকে শুরু এরপর টাইগারদের নির্ভরতার প্রতীক হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পার করেছেন আরও ১২ টি বছর। খেলেছেন ১২৮ টি ওয়ানডে ম্যাচ যেখানে বল ব্যাট হাতে সমান বিচরণ তার, রান করেছেন ৫৪৩৩ বোলিংয়ে ৪.৪৫ ইকনোমিতে নিয়েছেন ২৩৭ উইকেট।

টেস্ট ক্রিকেটে ও সমান দাপট দেখিয়েছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। ৫৩ ম্যাচে করেছেন ৩৬৯২ রান। সর্বোচ্চ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছেন ২১৭ রানের ইনিংস, বোলিং এ নিয়েছেন ১৯৬ উইকেট। সেরা ফিগার ৩৬ রানে ৭ উইকেট। ক্রিকেটের নবীন সংস্করণ টি-টোয়েন্টিতেও অপ্রতিরোধ্য সাকিব। লাল সবুজ জার্সি গায়ে এখন পর্যন্ত ৬৯ টি ম্যাচে করেছেন ১৩৬৮ রান। বোলিংয়ে ৬.৭৪ ইকোনমিতে নিয়েছেন ৮০ উইকেট যা বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ। সব মিলিয়ে তিন ফরম্যাটে ৩১০ ম্যাচ খেলে করেছেন ১০৪৯৩ রান, উইকেট নিয়েছেন ৫১৩ টি।
দেশের জার্সি গায়েই সুধু না, সাকিব আল হাসান বিশ্ব মাতিয়েছেন আইপিএল, সিপিএল, পিএসএল, বিগ ব্যাশে একমাত্র বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে নিয়মিত খেলে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান। ৩২ বছরে পা রেখেছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। দেশের ক্রিকেটেও অসাধারণ সাফল্য নিয়ে আসবেন এমনটাই প্রত্যাশা টাইগার ভক্তদের।