অনেক ঘটন-অঘটন আর জল্পনা-কল্পনার শেষে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ এর খেলা এখন সেমি ফাইনালে এসে ঠেকেছে। আগামী মঙ্গলবার আর বৃহস্পতিবারের দুই সেমিফাইনাল শেষে ১৪ তারিখের ফাইনালের মাধ্যমে পর্দা নামবে এবারের বিশ্বকাপের। আর বিশ্বকাপ সেমিফাইনালকে সামনে রেখে তাই আজকে আমাদের আয়োজন বিশ্বকাপের স্মরণীয় সেমিফাইনাল নিয়ে। এযাবৎ কালের সব বিশ্বকাপ মিলে সব সেমিফাইনাল ম্যাচ থেকে আমরা নির্বাচন করেছি সেরা ৫ সেমিফাইনাল।
#৫ ইংল্যান্ড বনাম দক্ষিন আফ্রিকা, সিডনি, ১৯৯২

বর্ণবৈষম্যের নিষেধাজ্ঞা শেষে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেই বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে পৌছে যায় দক্ষিন আফ্রিকা। বৃষ্টিবিঘ্নিত্ সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারীত ৪৫ ওভারে ২৫২ রানের পূঁজি পায় ইংল্যান্ড। সেই রান খুব ভালভাবেই তাড়া করছিল দক্ষিন আফ্রিকা। ম্যাচে বৃষ্টি আঘাত হানার আগে জন্টি রোডস এর ৩৮ বলে ৪৩ রানের ইনিংসে ৬ উইকেটে ২০৬ রানে পৌঁছে যায় তারা। বৃষ্টি থামলে প্রথমে প্রোটিয়াদের টার্গেট দাঁড়ায় ১৩ বলে ২২ রান।
কিন্তু মাঠ ভেজা থাকায় খেলা শুরু হতে আরো দেরি হয়। আর তাই বৃষ্টি আইনে আরো ২ ওভার কমানো হলেও রান কমে মাত্র ২। অর্থাৎ শেষ ১ বলে তাদের দরকার হয় ২০ রান। হাস্যকর আর একই সাথে বেদনাদায়ক এই বৃষ্টি আইনের ফাঁদে পড়েই কিনা, স্ট্রাইকে থাকা দক্ষিন আফ্রিকান ব্যাটসম্যান ডেভিড রিচার্ডসন শেষ বলটি আর মারারই চেষ্টা করেন নি।
#৪ পাকিস্তান বনাম নিউজিল্যান্ড, অকল্যান্ড, ১৯৯২

১৯৯২ এর বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের প্রথম সাত ম্যাচ জেতা নিউজিল্যান্ড শেষ ম্যাচে হেরে যায় পাকিস্তানের কাছে। তবে গ্রুপ ম্যাচে হারলেও বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল এ কিউইদের ই ফেবারিট ধরা হয়েছিল। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মার্টিন ক্রো’র ৯১ রানে তৎকালীন সময়ের বিবেচনায় ২৬২ রানের বিশাল পূঁজি পায় নিউজিল্যান্ড। আর সেই রানের জবাবে পাকিস্তান অধিনায়ক ইমরান খানের ৯৩ বলে ৪৪ রানের ইনিংসে শেষ দিকে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে যায় পাকিস্তান।
তখনকার দিনে শেষ দিকে ওভার প্রতি ৮ রান তাড়া করা ছিল এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার। কিন্তু সেই অবিশ্বাস্য ব্যাপারকেই বাস্তবতায় রুপ দানের কাজটি করেন তরুণ ইনজামাম-উল-হক। তার ৩৭ বলে ৬০ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংসে এক ওভার বাকি থাকতেই জিতে যায় পাকিস্তান।
#৩ অস্ট্রেলিয়া বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, মোহালি, ১৯৯৬

বিশ্বকাপ সেমিফিনাল এর মত যায়গায় ১৫ রানের মধ্যে টপ অর্ডারের ৪ উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকা অস্ট্রেলিয়াকে ২০০ রানের কোটা পার করান স্টুয়ার্ট ল মাইকেল বেভান। এই জুটিতে ১৩৮ রান যোগ হয়, যার মধ্যে ল করেন ৭২ আর বেভান ৬৯ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে লারা-চন্দরপলের ৬৮ আর চন্দরপল-রিচি রিচার্ডসনের ৭৩ রানের জুটিতে জয়ের পথেই ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিন্তু চন্দরপল ৮০ রানে আউট হওয়ার পর থেকেই পথ হারায় উইন্ডিজ। রিচি রিসার্ডসঙ্কে এক প্রান্তে রেখে লেগ স্পিন ঘূর্ণি একের পর টেল এন্ডারদের উইকেট তুলে নেনে শেন ওয়ার্ন। জয়ের থেকে মাত্র ৬ রান দূরে থাকতে অলআউট হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ, রিচি রিচার্ডসন অপরাজিত থাকেন ৪৯ রানে।
#২ নিউজিল্যান্ড বনাম দক্ষিন আফ্রিকা, অকল্যান্ড, ২০১৫

এর আগে বৃষ্টি দক্ষিন আফ্রিকার জন্যে অভিশাপ হয়ে এলেও এবার আসে আশির্বাদ হয়ে। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে আফ্রিকা ৪৩ ওভারে ২৮১ রান তুললেও ডি-এল ম্যাথডে নিউজিল্যান্ডের টার্গেট দাঁড়ায় ২৯৮ রান। সেই রানের জবাবটা অবশ্য বেশ ভাল্ভাবেই শুরু করেছিলেন কিউই অধিনায়ক ম্যাককালাম।
কিন্তু রানরেট ঠিক থাকলেও ২২ ওভারের মধ্যেই শুরুর চার উইকেট হারিয়ে বিপদে পরে যায় নিউজিল্যান্ড। সেখান থেকে শত রানের জুটি করেন গ্রান্ট এলিয়েট-কোরি এন্ডারসন। ডেল স্টেইনের করা শেষ ওভারে জয়ের জন্যে ১২ দরকার ছিল কিউইদের, আর ড্যানিয়েল ভেট্টরির এক চার আর এলিয়েটের ছয়ে ১ বল হাতে রেখেই ম্যাচ জিতে নেয় নিউজিল্যান্ড।
#১ অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিন আফ্রিকা, বার্মিংহ্যাম, ১৯৯৯

স্মরণীয় পাঁচ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল এর তালিকার তিন ম্যাচেই হতভাগা দলের নাম দক্ষিন আফ্রিকা। তবে এই ম্যাচটি সেমিফাইনালের সেরা তো বটেই, এটিকে ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ওয়ানডে ম্যাচ বললেও ভুল বলা হবে না।ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নাটকে ভরা এই ম্যাচটি ছিল ১৯৯৯ এর ক্রিকেট বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। প্রথমে দক্ষিন আফ্রিকার দুর্দান্ত বোলিং আক্রমনে অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডারে ধ্বস, এরপরে মিডল অর্ডারে স্টিভ ওয়াহ-মাইকেল বেভান জুটিতে ৯০ রান যোগ করে তারা। আবার শন পোলোকের ওভারে ওয়াহ আর মুডির আউটে আবার বিপদে পরে অজিরা। শেষমেশ বেভানের ৬৫ রানে লড়াই করার মত পূঁজি পায় অস্ট্রেলিয়া।
তাড়া করতে নেমে হার্শেল গিবসের ব্যাটে শুরুটা ভালই করে দক্ষিন আফ্রিকা। তবে মাঝে শেন ওয়ার্নের ঘূর্ণিতে ১৩ রানে ৩ উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা, পরে ক্যালিস আর জন্টি রোডস ৮৪ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যান। এই জুটির বিদায়ে আবার ম্যাচে ফেরে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু টুর্নামেন্ট সেরা ল্যান্স ক্লুজনারের ব্যাটে প্রায় জয়ের বন্দরে পৌছে যায় দক্ষিন আফ্রিকা
শেষ ওভারে তাদের দরকার ছিল ৯ রান, আর প্রথম দুই বলে চার মেরে ম্যাচ টাই করে ফেলে দক্ষিন আফ্রিকা। কিন্তু এর পরের বলেই নন স্ট্রাইকে থাকা শেষ ব্যাটসম্যান ডোনাল্ডের পাগলাটে রানআউটে ম্যাচটি হয়ে যায় টাই। কিন্তু সুপার সিক্স এ দক্ষিন আফ্রিকাকে হারানোর বদৌলতে ফাইনালে উঠে যায় অস্ট্রেলিয়া আর স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় পুড়তে হয় দক্ষিন আফ্রিকাকে।