আইপিএলের ১০তম সংস্করণটি তার নিজস্ব গৌরব সহ সফলভাবেই চলছে। সাকিব আর ফিজও তাদের ব্যক্তিগত পারফরমেন্স দিয়ে ভালই আগাচ্ছেন। আইপিএলের গত কয়েক মৌসুম ধরে এই দুজনই বাংলাদেশ ক্রিকেটের একমাত্র দূত হয়ে আছেন। যদিও প্রতিবছরই নিলামে ফ্র্যাঞ্চাইজির গুলো বিদেশী খেলোয়াড় কিনে থাকে। কখনও কখনও তারা বাংলাদেশের কিছু নামও তাঁরা তাঁদের দলে অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন। তবে সেটা কখনই নিয়মিত ভাবে ঘটে না।

আজ আপনাদের জন্যে থাকছে আইপিএলে বাংলাদেশিদের এযাবত কালের ইতিহাসের দৃশ্যকল্প।
আব্দুর রাজ্জাক

এই বাহাতি স্পিনার আইপিএলে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের পথিকৃৎ । আইপিএলের প্রথম মৌসুমে তাঁকে ৫০০০০ মার্কিন ডলার মূল্যে দলে ভেড়ায় আরসিবি। তবে তিনি মাত্র একবারই মূল একাদশের খেলার সুযোগ পান কিন্তু ২ ওভার বল করে ২৯ রান দেন। এটাই ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের একমাত্র আইপিএল অভিজ্ঞতা।
মোহাম্মদ আশরাফুল

সাবেক অধিনায়ক আশরাফুলকে ২০০৯ সালে আইপিএলের দ্বিতীয় সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তিনি ৭৫০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের স্কোয়াডে যোগ দেন। আর তিনিও মূল একাদশে খেলার সুযোগ পান একবারই আর তাতে তিনি ১০ বল খেলে মাত্র ২ রান করতে সক্ষম হন। তাঁর নামের সাথে এটা ছিল বড়ই বেমেনান আর এর এই পারফর্মেন্সের জন্যে তাঁকে পরবর্তী আর কোন আসরেই কোন দলই বিবেচনা করে নি।
মাশরাফি বিন মুর্তজা

বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ছিলেন ২০০৯ আইপিএল নিলামের অন্যতম বিষ্ময়। শুরুতে তাঁর ভিত্তি মূল্য ছিল মাত্র ৫০০০০ মার্কিন ডলার। তবে দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি কেকেআর আর কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব তাঁকে পাবার জন্যে এক নিলাম যুদ্ধে নামে অবশেষে কেকেআর ৬০০০০০ মার্কিন ডলার দর হেকে সেই নিলাম যুদ্ধের ইতি টানান।
প্রকৃতপক্ষে কেকেআর মাশরাফিকে বাঙ্গলাদেশি দর্শকদের বাজার দখল করার টোপ হিসেবে ব্যবহার করে। যদি তাই না হত, তবে কেউ কি কেন একটি রিজার্ভ বেঞ্চের প্লেয়ার কিনতে এত টাকা খরচ করে?
যদিও তিনি সেই মৌসুমের শেষ ভাগে এসে একম্যাচের জন্যে একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু একটি ওভারেই তাঁর আইপিএল ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়। ম্যাচের শেষ ওভারে তিনি ২১ রান দেন আর যার ফলে ম্যাচ হারে তাঁর দল। সেই ভয়ঙ্কর রাতের পর কেকেআর ম্যানেজমেন্ট তাঁকে আর বাকি মৌসুম ও পরবর্তী সংস্করণ কোনটার জন্যেই বিবেচনা করেনি।
সাকিব আল হাসান

এক নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব বিশ্বব্যাপী সমস্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লীগের নিয়মিত মুখ। তিনি ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো আইপিএলে কেকেআর স্কোয়াডে যোগ দেন ৪২৫০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে। এরপর ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি ফ্র্যাঞ্চাইজির একজন বাধ্যতামূলক অংশ ছিলেন। দলের প্রয়োজনে তিনি সর্বদাই তাঁর সেরাটা দিয়েছেন।
আর এই ২০১৮ সালের আইপিএলে তিনি ২ কোটি রুপির বিনিময়ে সানরাইজারস হায়দরাবাদে খেলছেন। এখন পর্যন্ত, তাঁর বর্তমান দল তাঁর সার্ভিসে খুবই সন্তুষ্ট। আশা করি তিনি তাঁদের কখনই হতাশ করবেন না, যা তিনি কখনো করেনও নি।
তামিম ইকবাল

আইপিএলে তাঁর জাতীয় সঙ্গীদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা ছিল তামিমের। যদিও ২০১২ আর ২০১৩ মৌসুমে তামিমকে ৫০০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে দলে নিয়েছিল পুণে ওয়ারিয়রস, কিন্তু মাঠে নিজেকে প্রমাণ করার কোন সুযোগই পান নি তিনি।
মুস্তাফিজুর রহমান

তিনি আইপিএলে বাংলাদেশের সর্বশেষ সংযোজন। এই কাটার মাস্টার তার অসাধারণ বোলিং দক্ষতা দিয়ে শুরু থেকেই সমগ্র বিশ্বেকেই অবাক করে আসছেন। তিনি সানরাইজারস হায়দরাবাদের হয়ে ২০১৬ সালে ১.৪ কোটি ভারতীয় রুপির বিনিময়ে আইপিএলে যোগ দেন।
ঐ বছর তার দলের চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি জয়ের অন্যতম প্রধান কারন ছিলেন এই ফিজ । বল হাতে তাঁর পারফরমেন্স তাকে সেই বছরের টুর্নামেন্টের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় হিসেবে পুরস্কার এনে দেয়।
কিন্তু তিনি তার অনিশ্চিত শারীরিক অবস্থার কারণে পরবর্তী মৌসুমে এত বেশি কার্যকর হতে পারেনি। আর এই বছর তিনি মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলছেন। এখন পর্যন্ত, একটি ম্যাচ ছাড়া তিনি ভাল করেছেন বলা যায়।
এতক্ষন এটা পড়ার পর কিছু প্রশ্ন আপনার মনে ঊকি দিতে পারে যে, “আইপিএলের প্রথম দিকের আসর গুলোতে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের ভুলটা কি হয়েছিল? আসলে তাঁরা সেখানে ব্যাপক এক প্রতিযোগীতামুলক পরিবেশের মধ্যে ছিলেন। সারা বিশ্বের নামি দামী খেলোয়াড়েরা তাঁদের সেরা খেলাটাও খেলছিলেন। আর তাই ঐ সাধারণ মানের পারফর্মেন্স দিয়ে তাঁদের জায়গা দখল করা ছিল এক কথায় অসম্ভব।
যদি তাঁরা নিজেদেরকে প্রমানের দ্বিতীয় কোন সুযোগ পেতেন তবে গল্পটা ভিন্ন হুলেও হতে পারতো। সে যাই হোক, আমরা আশা করবো সমনের মৌসুম গুলোতে আরো অনেক বাংলাদেশি ক্রিকেটার আইপিএলে দেশের নাম উজ্জ্বল করবেন। যেমনটা সাকিব ও মুস্তাফিজ এখন করছেন।